বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ভারসাম্য রক্ষায় বিএনপি সমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করার আহ্বান
আগামীকাল ২৫ মে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ সারা দেশের জেলা আইনজীবী সমিতিতে শেষ সময়ে চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা।
সুপ্রিম কোর্ট বার ও ঢাকা বারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের ব্যানার ফেসটুন ও লিফলেটে ছেয়ে গেছে। শেষ সময়ে প্রার্থীরা আইনজীবীদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। ভোট চেয়ে সময় পার করছেন। এ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে দুই পক্ষের আইনজীবীরাই আশাবাদী।
নির্বাচনে প্রার্থী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে বিএনপি সমর্থক সকল আইনজীবীদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সুষ্ঠভাবে বার কাউন্সিলের ভোট সমাপ্ত করার জন্য আপনারা উপস্থিত থাকবেন। আমাদের ভোট ছিনিয়ে নেয়া সহজ হবে না। এটা মগের মুল্লুক না। আমরা এটা মগের মুল্লুক বানাতে দেব না।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও বার কাউন্সিল নির্বাচনে সাধারণ আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদী বিভাগের স্বাধীনতার ভারসাম্য রক্ষায় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী প্যানেলকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আইনজীবীদের আইন পেশায় টিকিয়ে রাখতে বার কাউন্সিলকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ জসীম উদ্দীন সরকার বলেন, আইনজীবীরা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব। আইনজীবীদের কল্যাণে আমরা একটি কার্যকর বার কাউন্সিল করতে চাই। কিন্তু বার কাউন্সিলে সাধারণ আইনজীবীদের প্রাণের দাবি পূরণ হয়নি। এর প্রধান কারণ সততার অভাব। সততার অভাব না হলে আইনজীবীদের বেনাভোলেন্ট ফান্ড ৫ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা করা কোনো বিষয় না।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে বেনাভোলেন্ট ফান্ড আইনজীবীরা যাতে জীবদ্দশায় ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, করোনার দুঃসময় বার কাউন্সিল ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
বার কাউন্সিল নির্বাচনের প্রার্থী ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, আমিসহ আমার প্যানেলের সমস্ত সাধারণ আসনের প্রার্থীরা সারা বাংলাদেশে সফর করেছি। সারাদেশে আমাদের প্যানেলের পক্ষে সাড়া পেয়েছি। আমরা মনেকরি পরিচ্ছন্ন ভাবে যদি আইনজীবীরা ভোট দিতে পারেন এবং ভোট যদি সঠিকভাবে গণনা করা হয় তাহলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হবে। কিন্তু সব জায়গায় শঙ্কা বিরাজ করছে অনেকে আমাদের প্রশ্ন করছে ঢাকা বারের যে নির্বাচন হয়েছে সেখানে কিছু অনিয়মের কথা পত্র পত্রিকার মাধ্যমে আইনজীবীরা জেনেছেন। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট বারে কয়েকদিন আগে ভোট পুনঃগণনার নামে যে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছে। নির্বাচিত সম্পাদকের চেয়ার থেকে সরিয়ে আরেকজনকে, যে পরাজিত হয়েছে তাকে সেখানে বসানো হয়েছে। এটা আইনজীবীরা ভালোভাবে নেয়নি। এখানে আইনজীবীরা শঙ্কায় আছেন বার কাউন্সিলের ভোট সঠিকভাবে গণনা হবে কি না? কিন্তু সারাদেশে আইনজীবীদের ঐক্য প্যানেলের পক্ষে একটা ভালো সাড়া আছে। তবে আইনজীবীরা মনে করছেন এই প্যানেল যদি নির্বাচিত হয়, আইনজীবিদের কল্যাণে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারবে। বার কাউন্সিলকে কার্যকর করতে পারবে।
অন্যদিকে সরকার সমর্থকরা বিচারাঙ্গনের উন্নয়ন ও আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য তাদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্যানেলের পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রবীণ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান তার প্রচারপত্রে বলেন, বিজ্ঞ আইনজীবীগণের সার্বিক কল্যাণ এবং আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, গণতন্ত্র ও বিচারপ্রার্থী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি এবং জীবনের বাকি সময়টুকু একইভাবে থাকার প্রত্যায় ব্যক্ত করছি। মুক্তিযুদ্ধের এই প্যানেলের জন্য বিজ্ঞ আইনজীবী বন্ধুদের দোয়া, সদয় সমর্থন ও মূল্যবান ভোট কামনা করছি।
বার কাউন্সিল নির্বাচনে ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী যারা:
জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের সাতটি সাধারণ আসনের প্রার্থীরা হচ্ছেন- সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ জসীম উদ্দীন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আইনজীবী আব্দুল মতিন।
গ্রুপ আসনে ঢাকা জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ-এ) মো: মহসিন মিয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ বি) আ: বাকী মিয়া, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ সি) এ এস এম বদরুল আনোয়ার, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ডি) এটিএম ফয়েজ উদ্দিন, বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ই) মো: এনায়েত হোসেন বাচ্চু, বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ এফ) মো: মাইনুল আহসান এবং বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ জি) শফিকুল ইসলাম টুকু।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’র সাতটি সাধারণ আসনের প্রার্থীরা হচ্ছেন- প্রবীণ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, মো: কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বাদল, শাহ মো: খসরুজ্জামান, মো: রবিউল আলম (বুদু), মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ (রাজা) ও মো: নজরুল ইসলাম খান।
গ্রুপ আসনে ঢাকা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ-এ) আবদুল বাতেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ বি) মো: জালাল উদ্দিন খান, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ সি) মোহাম্মদ মুজিবুল হক, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ডি) এ এফ মো: রুহুল আনাম চৌধুরী, বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ই) আনিছ উদ্দিন আহমেদ সহিদ, বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ এফ) মো: একরামুল হক এবং বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ জি) মো: আব্দুর রহমান।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টি আসনে জয় পায় সরকার সমর্থকদের সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। অপরদিকে বিএনপি জোটের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল পেয়েছিল মাত্র দু’টি আসন।
আগামী ২৫ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বার কাউন্সিলের ১৪ জন সদস্য নির্বাচনের জন্য এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।