ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে ভারতসহ ১৩ দেশ, বাদ পড়েছে বাংলাদেশ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এশিয়া নীতির অংশ হিসাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে ভারতসহ ১৩ দেশ যোগদান করবে। এ অঞ্চলে চীনের আগ্রাসী প্রভাবের পালটা হিসাবে নতুন এই বাণিজ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অবশ্য বাইডেনের এ উদ্যোগ থেকে শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে পাশে রেখে এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন নতুন এই অর্থনৈতিক বলয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এই জোটের অন্য নেতারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলেন।
বাইডেন বলেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্য ১১টি দেশ নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর প্রসপারিটি’ সংক্ষেপে আইপিইএফ গঠিত হবে। তিনি বলেন, ২১ শতকে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিশ্চিত করতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে এই ফ্রেমওয়ার্ক বদ্ধপরিকর।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সোমবার বলেন, ‘আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানি না। আমাদের উনারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেনওনি। আপনার মতো আমরা এখন শুনছি।’
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসন এই উদ্যোগ শুরুর সময়ে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কূটনৈতিক পর্যায়ে ব্রিফ করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের হোমওয়ার্ক সম্পন্ন না হওয়ায় ঢাকার ধীরে চলো নীতি ছিল।
ফলে চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশের পরিবর্তে ব্রুনাইকে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করে। তাছাড়া, আইপিইএফে শুল্ক কিংবা বাজার সুবিধা না থাকায় ঢাকার আগ্রহ কমে যায়। এই গ্রুপ অপরাপর বাণিজ্য গ্রুপের মতো ট্যারিফ ও বাজার সুবিধা নিয়ে কোনো আলোচনা করবে না।
তবে আইপিইএফ চারটি প্রধান ক্ষেত্র ডিজিটাল অর্থনীতি, সরবরাহ চেইন, ক্লিন এনার্জি অবকাঠামো এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে পারস্পরিক সম্মতিতে মানদণ্ড নির্ধারণ করবে।
ট্রাম্পের আমলে সামরিক ও বাণিজ্য জোট দুর্বল হলেও ২০২১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে বাইডেন তা জোরদার করছেন। গোটা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক উপস্থিতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীদের আইপিইএফ বিকল্প জোট।
ট্যারিফ ভিত্তিক বাণিজ্যিক জোট ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে ২০১৭ সালে ট্রাম্প নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে ২০১৮ সালে ‘কম্প্রেহেনসিভ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ অ্যাগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ গড়ে তোলা হয়েছিল।
আইপিইএফের সমালোচনা করে চীন বলেছে, এটি একটি বন্ধ ক্লাব। বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান চীনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটির ডিজাইন ও সংজ্ঞাতেই একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফরম। তাইওয়ানকে এই জোটে রাখা হয়নি।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী গিমা রাইমন্ডো বলেছেন, এটা এই অঞ্চলে যে কোনো মানদণ্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ এক টার্নিং পয়েন্ট। এই ক্ষেত্রে চীনের অ্যাপ্রোচের একটি বিকল্প।
আইপিইএফে যে ১৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলো হলো-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম।
দেশগুলো একত্রে বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি দেশ এ জোটে যোগ দিল। সিঙ্গাপুরে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো অ্যারন কনেল্লি বলেছেন, আমেরিকার বাজারে সুবিধা বৃদ্ধি না করে নিয়মের পরিবর্তন কঠিন হবে।
আইপিএফের ১৩ দেশের যে কোনো দেশ চারটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রের যে কোনো ক্ষেত্রকে কাজ করার জন্যে বেছে নিতে পারে। জুনের শেষ কিংবা জুলাইয়ের শুরুর দিকে চূড়ান্ত মানদণ্ড নির্ধারিত হবে। দেশগুলো ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে চুক্তির অনুসমর্থন সম্পন্ন করবে।