অডিটোরিয়াম তো সিনেমা প্রদর্শনীর স্থান নয়: অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
জামালপুরে চিত্রায়িত ঈদের অন্যতম ছবি ‘গলুই’। সরকারি অনুদান পেয়ে শাকিব খানকে নিয়ে আলোচিত ছবিটি বানালেন এসএ হক অলিক। ঈদের দিন (৩ মে) থেকে দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি ছবিটি চলছিলো জাপমালপুরের চারটি অডিটোরিয়ামে। কারণ, সেখানে মাত্র একটি প্রেক্ষাগৃহ। সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য, সেই অঞ্চলের দর্শকমনে হলশূন্যতার অভাবটা যেন পূরণ হয়।
ঈদের দিন থেকে ছবিটি চললেও ৯ মে সেই প্রদর্শন বন্ধ করে দেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুর্শেদা জামান। প্রযোজক-পরিচালকের সামনে তুলে ধরেন ১৯১৮ সালের দ্য সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট। জানান, আইনে নেই- তাই সিনেমা হলের বাইরে ছবিটির বাণিজ্যিক প্রদর্শন করা যাবে না। অথচ গ্রামীণ পটভূমির এই ছবিটিকে ঘিরে গত এক সপ্তাহে যেন উৎসবের ঢল নেমেছিল জামালপুরজুড়ে।
এমন কাণ্ডের বিপরীতে নির্মাতা-প্রযোজক ও সংশ্লিষ্টরা নির্বাক হলেও প্রতিবাদ ওঠে ঢাকা থেকে অন্তর্জালজুড়ে। বলা হয়, স্বাধীন দেশের ৫০ বছর পেরিয়েও পাকিস্তান আমলের আইনে আটকে গেল একটি দেশাত্মবোধের সিনেমা প্রদর্শন!
ঠিক কী কারণে এমনটা ঘটলো, ৯ মে সকাল থেকে এর জবাব মেলেনি জামালপুরের জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামানের কাছ থেকে। তিনি ফোন রিসিভ করছেন না। তবে জবাব মিললো অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোখলেছর রহমানের কাছ থেকে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিনেমাটি প্রদর্শনীর জন্য নতুন করে আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেনি। তাছাড়া এসব (বাণিজ্যিক) সিনেমা লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রেক্ষাগৃহেই চলার কথা। এখানে আইনের কোনও বিষয় নেই। সব অডিটোরিয়াম নিয়মনীতি মেনে চালানো হয়। অডিটোরিয়াম তো সিনেমা প্রদর্শনীর স্থান নয়। কোনও অডিটোরিয়ামে সিনেমা প্রদর্শনী হবে, এটা হতে পারে না।’
এর আগে ২৯ এপ্রিল আবেদন করে সিনেমাটি প্রদর্শনের জন্য এক সপ্তাহের অনুমোদন পান ‘গলুই’ সংশ্লিষ্টরা। ঈদের দিন থেকে জেলা পরিষদের কাছ থেকে সাত দিনের অনুমতি নিয়ে জামালপুর শিল্পকলা একাডেমির নতুন অডিটোরিয়াম, জামালপুরের মাদারগঞ্জে নুরুন্নাহার মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম, ইসলামপুরের ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়াম ও জামালপুর মির্জা আজম অডিটোরিয়ামে এ সিনেমার প্রদর্শন চলে আসছিলো।
সোমবার (৯ মে) প্রদর্শনীর অনুমোদনের শেষ দিন। এরপর আর অনুমোদন বাড়ানো হচ্ছে না দাবি করেছেন ‘গলুই’ সিনেমার পরিচালক এসএ হক অলিক।
অলিক বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রথমে শিল্পকলা অ্যাকাডেমি পরে মির্জা আজম অডিটোরিয়াম, মাদারগঞ্জ এবং ইসলামপুরে সিনেমাটি প্রদর্শন করে আসছিলাম। ঈদের দিন থেকেই দর্শকের উপচেপড়া ভিড় ছিল। জামালপুর এবং মাদারগঞ্জে সিনেমার প্রদর্শনী চলছিল কিন্তু ইসলামপুরে ঈদের পরের দিন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়। আবারও আবেদন করা হয়। আবেদনে প্রেক্ষিতে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য কোনও অনুমোদন দেয়া হয়নি। আমাদের বলা হয়, ১৯১৮ সালের আইনের আওতায় আর অনুমোদন দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও জানান, ‘ওই আইনে আছে সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না। জামালপুরে একমাত্র মেলান্দহ ছাড়া জামালপুরের আর কোথাও কোনও সিনেমা হল নেই। সিনেমাটি দেখানোর বিকল্প পথ হিসেবে আমরা অডিটোরিয়ামগুলোকে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে সেই পথটাও বন্ধ করে দিলেন জেলা প্রশাসক।’