আ.লীগ দেশের সার্বভৌমত্ব বন্ধক রাখার শর্তে ক্ষমতায় টিকে আছে : রিজভী
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি গোষ্ঠী সরকার উৎখাত করতে চায়, আমাদের অপরাধটা কী? কোথায় ব্যর্থ হয়েছি? অনেকে অতি জ্ঞানী হলেও তারা কম বোঝে, তাকিয়ে থাকে কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে। তারা বসে থাকে, কখন সিগন্যাল আসবে। বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে, বিদেশ থেকে যেন তাদের ক্ষমতায় বসাবে। জনগণকে ধন্যবাদ-তারা বারবার ভোট দিয়েছে, টানা ৩ বার ক্ষমতায় রেখেছে। তিনি গতকাল আরেকটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, সাদা চামড়া দেখলেই নালিশ করতে পছন্দ করেন অনেকে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপরোক্ত কথা শুনে মনে হবে তিনি যেন ভুতের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেশের মানুষ যে তাঁর এ কথা শুনে চাপাহাসি হাসবে তা তিনি ভাল করেই জানেন। কেন যে নোবেল কমিটি প্রধানমন্ত্রীর নাম নোবেল কমিটিতে তুলছে না তা বুঝতে পারছি না। বার বার জণগণের ভোট ডাকাতি করে দিনের ভোট রাতে করে বলছেন- জনগণ আপনাদের বারবার ক্ষমতায় বসিয়েছে। লাখ লাখ ডলার খরচ করে লবিষ্ট নিয়োগ দিয়ে, অন্য দেশের কাছে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব বন্ধক রাখার শর্তে ক্ষমতায় টিকে থেকে অন্যকে সবক দিচ্ছেন। একটি প্রবাদ আছে-চুরি তো চুরি আবার সিনাজুরি’। এটি আপনার বক্তব্যের বেলায় শতভাগ প্রযোজ্য।
আজ সোমবার (৯ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি কি মনে করেন না যে, দিনের ভোট রাতে করেছেন? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একের পর এক কালো আইন করে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছেন? নির্দোষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকিয়ে রেখে রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন ? দেশকে বিরোধী দল শুন্য করতে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জাকির, সুমন, জনিসহ হাজার নেতা-কর্মীকে গুম, খুন করিয়েছেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ কর্মীকে বন্দি করে রেখেছেন এবং এই মামলার বেড়াজালে প্রতিনিয়ত হয়রানীর আবর্তে তাদের বন্দী করে রেখেছেন। উন্নয়নের নামে দলীয় নেতা-কর্মীদের লুটপাটের সুযোগ করে দিয়ে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারের ব্যবস্থা করে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, ব্যাংক, বীমা ও শেয়ার বাজার ধ্বংস করেছেন, সরকারী দলের সিন্ডিকেটকে লুটের সুযোগ করে দিতে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন করার সুযোগ দিয়েছেন, মানুষকে বেগুনিতে বেগুনের পরিবর্তে মিষ্টি কুমড়া, তেল ছাড়া রান্না অথবা সয়াবিনের পরিবর্তে বাদাম তেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি আরও বলেছেন, আপনি নাকি মাটি ও মানুষের রাজনীতি করেন। আপনার এই কথাটিকে অবিশ্বাস করি না, তবে কয়েকটি শব্দ আপনার বক্তব্য থেকে ছুটে গেছে, আসলে সেটি হবে অন্যের মাটি দখলের ও বিরোধী দলের মানুষ হত্যার রাজনীতি। কিভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ীঘর, ব্যবসা বানিজ্য, দোকান-পাট যেভাবে আপনার নেতাকর্মীরা দখল ও লুটপাট করেছে সেটি আপনার মাটি ও মানুষের রাজনীতিরই উজ্জল দৃষ্টান্ত।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন ফেয়ার ও সুষ্ঠু হবে বলে। বিএনপিসহ সব দলকে নিয়েই ভোট করতে চাই। নিশ্চয়তা দিচ্ছি নির্বাচন ফেয়ার হবে। ইভিএমে ভোট হবে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকবে। তিনি আরও বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, তাদের (বিএনপি) অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই নির্বাচনে আসতে হবে। আমরাও একটি শক্তিশালী বিরোধী দলকে সংসদে স্বাগত জানাতে চাই। চাইবো বিরোধী দলের স্ট্যান্ড থাকুক।
রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি শুধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নন, বিএনপি’রও বোধ হয় উপদেষ্টা। তিনি সর্বদা বিএনপি-কে নিয়ে যে চিন্তায় থাকেন তাতে মনে হয় তিনি আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তিনি ফেয়ার নির্বাচন বলতে ‘ফেয়ার এন্ড লাভলী’র কথা বুঝিয়েছেন কি না তা বোধগম্য নয়। ফেয়ার নির্বাচনের একটি আওয়ামী ভার্সন রয়েছে যা ১৪ বছরে দেশের মানুষ দিব্যচোখে অবলোকন করেছে। তার ফেয়ার নির্বাচনের সংজ্ঞা অনুযায়ী সুষ্ঠু ভোট হলো-সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জনগণকে কাবু করতে সকল শক্তি নিয়োগের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বিনা ভোটের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের নির্বাচন। আগামী নির্বাচন ইভিএমে হবে এবং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকার যে কথা আপনারা বলেছেন তাতেই আপনার আগাম বার্তা জনগণ ষ্পষ্ট বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচন হবে মহাজালিয়াতির ও দস্যুবৃত্তির।
বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর পাতা ঝরতে শুরু করেছে, এরা এখন ঝরা পাতা। তাই লুটপাট আর রক্তপাতের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কোন রকমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। দেশব্যাপী সোয়াবিন তেল নিয়ে যে তেলেসমাতি চলছে তাতেই বুঝা যায়-সরকার লুন্ঠনের কর্মসূচি ছাড়া তাদের অন্য কোন কর্মসূচি নেই। বলা হচ্ছে তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার মুনাফাখোরদের সুযোগ করে দিচ্ছে। একেবারেই ভুল তথ্য। সরকার এবং মুনাফাখোর একাকার। আলাদা ভাবার কোন অবকাশ নেই। তেল আমদানিকারক বড় ৫টি কোম্পানী সবাই সরকারের সঙ্গে যুক্ত। সরকারী মুনাফাখোর, মুনাফাখোরই সরকার। এ কারণেই সরকারের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য মাফিয়ার মতো। মাফিয়ারা নিজের শক্তিতে বলিয়ান। এরা কাউকে সুবিধা দেয় না, নিজেরা সুবিধাভোগীর একটি বিশেষ চরিত্র হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী সরকারের সামগ্রিক চরিত্র এটি।
তিনি বলেন, সর্বত্রই ক্ষমতাসীনদের মিথ্যার বেসাতি। মিথ্যার বাড়াবাড়ি কখনোই কোন সুসংহত বিজয় আনতে পারে না। এদের জারক-রস ফুরিয়ে এসেছে। কোন চক্রান্ত দিয়ে সংগ্রামী জনগণকে নতি স্বীকার করানো যাবে না। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে এবং ব্যালট পেপারই হবে ভোট দানের পদ্ধতি। এই সরকারের পতন অত্যাসন্ন। এই সরকারের পতনের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ স্থান হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
এ সময় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।