বিএনপির ৬৮ প্রার্থীর মাথায় ১৮৩৮ মামলা
ঢাকা সিটি করপোরশেন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার। মেয়র প্রার্থীদের প্রচার জমে উঠতে শুরু করেছে। জমে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারও। তবে তাদের তুলনায় নির্বাচনের মাঠে কম দেখা যাচ্ছে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের অধিকাংশকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘মামলার বোঝা’ থাকার কারণে এক ধরনের চাপ অনুভব করছেন বিএনপি সমর্থিত অনেক কাউন্সিল প্রার্থীই। বেশিরভাগ প্রার্থীই মামলায় জামিনে থাকলেও কারও কারও নামে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তাই অনেকেই নিজের বাসায় থাকছেন না; প্রচার চালাচ্ছেন কৌশলে। বিএনপি সমর্থিত এমন কাউন্সিলর প্রার্থীও আছেন যার নামে ৬৩টি মামলা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে বিএনপির ৫৬ জন প্রার্থীর হলফনামা ঘেঁটে তাদের নামে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ৫৬ জনের নামে মোট ১ হাজার ৬৫০টি মামলা রয়েছে, এ হিসাবে গড়ে প্রত্যেক কাউন্সিলর প্রার্থীর নামে ২৮টি করে মামলা আছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে বিএনপির ১২ কাউন্সিলর প্রার্থীর হলফনামা ঘেঁটে তাদের নামে ১৮৮টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে, এ হিসাবে গড়ে প্রত্যেক প্রার্থীর নামে ১৫টি মামলা আছে।
প্রচারের পরিস্থিতি জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির পক্ষে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ প্রার্থীর নামে মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তারা জামিন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় তো প্রার্থীদের আছেই। তারা (প্রার্থী) নিজের বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় অবস্থান করে কৌশলে নির্বাচনের প্রচার করছেন। তবে এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। সময় গেলে বোঝা যাবে কী হয়।’
ডিএসসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুকুল ইসলাম। তার হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি ১২টি মামলার আসামি। তবে সবকটিতেই জামিনে আছেন। বিএনপির প্রার্থীদের হলফনামা ঘেঁটে আরও দেখা গেছে, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাসুদ চৌধুরীর নামে ২টি, ৩ নম্বরের আবুল হোসেনের নামে ১৫টি, ৪ নম্বরের গোলাম হোসেনের নামে ৩০টি, ৫ নম্বরের মনোয়ার হোসেন মানুর নামে ১টি, ৬ নম্বরের শামসুল হুদার নামে ১৭টি, ৭ নম্বরের সামসুল হুদার (কাজল) নামে ২৭টি, ৮ নম্বরের আলমগীর হোসেনের নামে ১৬টি, ৯ নম্বরের আনোয়ার হোসেনের নামে ৯টি, ১০ নম্বরের হারুন অর রশীদের নামে ৫০টি, ১২ নম্বরের ফজলে রুবাইয়াতের নামে ১৭টি, ১৩ নম্বরের আব্বাসউদ্দিন সরকারের নামে ২৪টি, ১৪ নম্বরের হাবিবুর রহমানের নামে ২০টি, ১৫ নম্বরের শফিকউদ্দিন ভূঁইয়ার নামে ১টি, ১৬ নম্বরের সিরাজুল ইসলামের নামে ৬৩টি, ১৮ নম্বরের জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীর নামে ১৪টি, ১৯ নম্বরের মো. কালামের নামে ৮টি, ২০ নম্বরের স্বপনের নামে ২০টি, ২১ নম্বরের খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিবের নামে ৬টি, ২২ নম্বরের আনিসুর রহমানের নামে ৬টি, ২৩ নম্বরের আমিনুল ইসলামের নামে ৩৮টি, ২৪ নম্বরের মোশারফ হোসেনের নামে ৩৫টি, ২৬ নম্বরের মীর আশরাফ আলী আজমের নামে ৫৩টি, ২৮ নম্বরের আনোয়ার পারভেজ বাদলের নামে ১৯টি, ২৯ নম্বরের শহিদুল ইসলাম বাবুলের নামে ১৫টি, ৩২ নম্বরের তাজউদ্দিন আহমেদের নামে ৪০টি, ৩৩ নম্বরের লতিফুল্লাহ জাফরুর নামে ৫টি, ৩৪ নম্বরের মামুন আহম্মেদের নামে ১৫টি, ৩৫ নম্বরের ইয়াকুব সরকারের নামে ৫টি, ৩৬ নম্বরের আবু তাহেরের নামে ১৪টি, ৩৭ নম্বরের ফরহাদ রানার নামে ৫টি, ৩৯ নম্বরের সাব্বির আহমেদ আরেফের নামে ১৯টি, ৪০ নম্বরের মকবুল ইসলাম খান টিপুর নামে ৪০টি, ৪১ নম্বরের লিয়াকত আলীর নামে ৩১টি, ৪৪ নম্বরের আব্দুস সাহেদ মন্টুর নামে ২০টি, ৪৫ নম্বরের আ. কাদিরের নামে ২১টি, ৪৬ নম্বরের মো. ফারুকের নামে ৪টি, ৪৭ নম্বরের কাজী মাহাবুব মাওলা হিমেলের নামে ৯টি, ৪৮ নম্বরের আব্দুল কাদেরের নামে ৩টি, ৪৯ নম্বরের বাদল সরদারের নামে ৩৫টি, ৫০ নম্বরের মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নামে ৭টি, ৫১ নম্বরের আলীম আল বারী জুয়েলের নামে ২৭টি, ৫২ নম্বরের রবিউল ইসলাম দীপুর নামে ৫টি, ৫৩ নম্বরের মীর হোসেন মিরুর নামে ৩০টি, ৫৪ নম্বরের মোজাম্মেল হোসেনের নামে ২২টি, ৫৫ নম্বরের মো. সামির নামে ১৭টি, ৫৬ নম্বরের মো. নাঈমের নামে ২৭টি, ৬১ নম্বরের জুম্মন মিয়ার নামে ১৯টি, ৬৩ নম্বরের সোহেল আহমেদের নামে ২৪টি, ৬৫ নম্বরের সানাউল্লাহ মিয়ার নামে ১০টি, ৬৭ নম্বরের এসএম রেজা চৌধুরী সেলিমের নামে ৭টি, ৬৮ নম্বরের মো. আনিসুজ্জামানের নামে ৪টি, ৭১ নম্বরের খোরশেদ আলমের নামে ১০টি, ৭২ নম্বরের জিয়াউল হক রতনের নামে ৬টি, ৭৩ নম্বরের এইচএম সোহরাওয়ার্দীর নামে ৬টি এবং ৭৫ নম্বরের আকবর হোসেনের নামে ১১টি মামলা আছে। তারা সবাই জামিনে আছেন বলেও হলফনামায় বলেছেন।
ডিএসসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফারুকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নামে ১২-১৩টি রাজনৈতিক মামলা আছে। ১০-১২ বছর ধরে নিজ বাসায় থাকতে পারছি না। সাতবার জেল খেটেছি। এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবেই দেখছি।’ ডিএসসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন নিয়ে লড়ছেন মীর আশরাফ আলী আজম। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমার নামে ৫৩টি মামলা রয়েছে। সব মামলায় আমি জামিন নিয়েছি। এখন দল থেকে সমর্থন দেওয়ার পর মাঠে কাজ করছি। এখনো পর্যন্ত কোনো হয়রানির শিকার হইনি।’ ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার নামে ৪০টি মামলা রয়েছে। এরই মধ্যে আদালত থেকে সব মামলায় জামিন নিয়েছি। তবুও ভয়ভীতি নিয়ে নির্বাচনে কাজ করছি।’
ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিএনপি থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে ৫২টি ওয়ার্ডে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে হলফনামার তথ্য দেওয়া আছে ১২ জনের। তাদের মধ্যে ৯ নম্বরের সাইদুল ইসলামের নামে ৪টি, ১০ নম্বরের মাসুদ খানের নামে ৫টি, ১৩ নম্বরের আনোয়ার শাহাদাৎ খান রনির নামে ১টি, ২৪ নম্বরের হুমায়ুন কবির আহম্মেদের নামে ১১টি, ৩১ নম্বরের সাজেদুল হক খান রনির নামে ৪টি, ৩২ নম্বরের আতিকুল ইসলাম মতিনের নামে ১৯টি, ৩৩ নম্বরের এমএস আহমেদ আলীর নামে ১১টি, ৩৪ নম্বরের ওসমান গনি শাহজাহানের নামে ২১টি, ৩৫ নম্বরের শেখ আমির হোসেনের নামে ৪৭টি, ৪৩ নম্বরের আক্তার হোসেনের নামে ২৮টি, ৪৪ নম্বরের আনোয়ার হোসেন আইনালের নামে ২০টি ও ৪৫ নম্বরের জাহাঙ্গীর আলমের নামে ১৭টি মামলা রয়েছে। সব মামলায়ই তারা জামিনে আছেন বলে হলফনামায় বলা আছে।