‘আওয়ামী লীগের এই সরকার স্বাধীনতাবিরোধী সরকার’

0

দেশকে রক্ষা করতে বর্তমান সরকারকে হটানোর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে। এদের উৎখাত না করলে দেশের মানুষ বাঁচবে না। তারা গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছে, লাখো মানুষকে ঘরছাড়া করেছে।

গতকাল বৃহ‌স্পতিবার (২৪ মার্চ) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি’র আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী ও বইমেলায় এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদেরে এই সরকার আমাদের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ৬ শতাধিক মানুষকে তারা গুম করেছে। সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে।

স্বাধীনতা পদক প্রদানের ক্ষেত্রে আমির হামজার বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগকে একটি ব্যার্থ দল হিসেবে আখ্যা দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এতটা ব্যর্থ, যে স্বাধীনতা পদক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন সেই পদক নিয়েও তারা দুর্নীতি করে। আমীর হামজা নামে একজনকে পদক দিয়ে সেটা বাতিল করে এখন তদন্ত করছে। আরও যাদের পদক দিয়েছেন তাদেরটাও তদন্ত করুন, তারা কারা। বেশির ভাগই হয় তারা মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজন অথবা তারা প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন।

স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগত করে, এই দেশকে নিজেদের সম্পদ ও মানুষকে সেবক বানিয়ে নিজেদের প্রভু দাবি করে আওয়ামী লীগ এমনটা উল্লেখ করে বিএনপি এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের  বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকা উচিত না। প্রশ্নটা তাহলে কোথায়? প্রশ্ন হচ্ছে যারা (আওয়ামী লীগ) মুক্তিযুদ্ধের সবকিছুর দাবিদার হয়ে গেল। যারা এমন মনে করেন তারাই একমাত্র দেশের মালিক এবং মোক্তার। জনগণ তাদের সেবক এবং তারা প্রভু। স্বাধীনতার পরপরই তারা সেটার প্রমাণ দিতে শুরু করেছে। একে একে আমাদের স্বাধীনতার সমস্ত স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, যে লক্ষ্য নিয়ে লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, আমাদের মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। সেই লক্ষ্যগুলোকে একেবারেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। যখন তারা কোনো কিছুই ধরে রাখতে পারেনা, তখন তারা সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার লক্ষ্য ও স্বপ্ন গুড়িয়ে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল। সমস্ত পত্রিকাগুলো নিষিদ্ধ করেছিল। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা যখনই ক্ষমতায় যায়,তখনই তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া। তারপর শুরু করে লুটপাট, এত লুটপাট করে যে দেশটা একটা ফোকলায় (ফাপা) পরিণত হয়।

আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা ও জনবিরোধী উল্লেখ করে দলটিকে রুখে দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। দ্রব্যমূল্য এতটাই বেড়ে গেছে যে মানুষের পক্ষে এখানে আর বেঁচে থাকা সম্ভব না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নানা গবেষণা করে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, গৃহহীন ও উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ আওয়ামী লীগ সবসময় বলে বেড়াচ্ছে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ধ্বনির সংখ্যা বাড়ছে এবং উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ।‌ একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের এই সরকার স্বাধীনতাবিরোধী সরকার। জনগণের বিরুদ্ধে সরকার। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি আর তারা আছেন কিভাবে লুটপাট করে, দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করবে এই চিন্তায়।

বিএনপি নিয়ে ওবায়দুল কাদের সব সময় দুঃস্বপ্ন দেখেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন,  ‘২৪ ঘন্টা ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপি’র দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন। তার ঘুম হয় না সমানে কথা বলতে থাকেন। ওইখানেই তো বোঝা যায় বিএনপি শুধু আছে না, প্রবলভাবে আছে এবং তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। উনি প্রায়ই বলে থাকেন, বিএনপিকে নাকি বিদেশীদের উপর নির্ভর করতে হয়। আমি বলছি, বিএনপি কোনো দিনই বিদেশীদের উপর নির্ভর করেনি। ‘৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসেছিল খালেদা জিয়ার দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীকালে ২০০১ সালেও জনগণের ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। এবং এখনো গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য গৃহবন্দি আছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৪০ বছর ধরে তিনি দেশের জনগণকে ভালোবেসে গণতন্ত্রকে ভালোবেসে রাজনীতি করে চলেছেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমান কতটা সফল? উল্লেখ করে বিশেষ বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, আধুনিক বাংলাদেশের মূল তিনটি স্তম্ভ সেটি জিয়াউর রহমান করে দিয়ে গিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ যে তিনটি মূল স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে। তার একটি হচ্ছে কৃষি, এই সেক্টরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিপ্লব ঘোষণা করেছিলেন। তিনি খাল কেটে কৃষকদের জমির পাশে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ৭৪ সালে দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল। সেসময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কৃষিবিপ্লবের ভাবনায় তখন দেশ দুর্ভিক্ষ মুক্ত হতে পেরেছিল। তিন থেকে চারগুণ কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ রেমিটেন্স। সেটিও বাংলাদেশের প্রথম আসতে শুরু করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বুদ্ধিমত্তার কারণে। আরো একটি হচ্ছে পোশাক শিল্প। সে আমলে জিয়াউর রহমান নিজের পোশাক শিল্প বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জোরদার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পোশাকশিল্পের তরুণ উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com