মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন না: সরকারের প্রতি জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞরা

0

মানবাধিকার কর্মী ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসঙ্ঘকে সহযোগিতার করার কারণে তারা সরকারের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন।

জেনেভা থেকে গত মঙ্গলবার দেয়া বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত ১০ ডিসেম্বর র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ হুমকি, চাপ প্রয়োগ ও হয়রানি শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভুক্তভোগী অন্তত ১০টি পরিবারের বাড়িতে গভীর রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানকালে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও ভয় দেখানো হয়। সাদা কাগজে বা আগে থেকেই লিখে রাখা কাগজে তাদের সই করতে বাধ্য করা হয়। আগে থেকে লিখে রাখা কাগজে উল্লেখ করা থাকে যে, সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য গুমের শিকার হননি, বরং তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন।

বিষয়টিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যায়িত করে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগের সাথে গুমের শিকার পরিবার, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের ওপর ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল অবস্থা লক্ষ করেছেন। সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বারবার নাগরিক সমাজের কিছু সংগঠনের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের কাছে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ করছেন, যা এ সব সংগঠনের মূল কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন ও মানবাধিকার কর্মীরা যাতে তাদের বৈধ কাজকর্ম নিরাপদ পরিবেশে কোনো ধরনের হুমকি, চাপ বা প্রতিহিংসার ভীতি ছাড়া করে যেতে পারেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সরকারের প্রতিশোধমূলক কাজ মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করতে পারে, যা তাদের মানবাধিকারসহ জনস্বার্থ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে জাতিসঙ্ঘের প্রক্রিয়ার সাথে সহযোগিতা করা থেকে বিরত রাখতে পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে বেশির ভাগ গুমের ঘটনার সাথে র্যাব জড়িত থাকার খবর বের হয়েছে, যা জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এসব গুরুতর অভিযোগের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বিশদ অনুসন্ধানসহ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য দায়বদ্ধ। একই সাথে র্যাবসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে তদন্ত ও ফৌজদারি দায় থেকে রেহাই দেয়া উচিত না।
বিশেষজ্ঞরা ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর অধিকার রক্ষা এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে বিশেষজ্ঞরা যোগাযোগ রাখবেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতি দেয়া বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসঙ্ঘের বলপূর্বক অথবা অনৈচ্ছিক অন্তর্ধানবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ার র্যাপোর্টিয়ার লুসিয়ানো হাজান, ভাইস চেয়ার মিস অ বালাদ, স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার অন এক্সট্রাজুডিশিয়াল, সামারি অর আর্বিটারি একজিকিউশন মিস গ্যাব্রিয়েলা স্ট্রিনি, হেনিরিকাস মিকেভিকাস এবং ত-উং বাইক, স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার অন টর্চার অ্যান্ড আদার ক্রুয়েল ইনহিউম্যান অর ডিগ্রেডিং ট্রিটমেন্ট অর পানিশমেন্ট নিলস মেলজার প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com