বিচারবহির্ভূত হত্যা: পুলিশ-ডিবি প্রথম, দ্বিতীয় র্যাব ৩ বছরে হত্যার শিকার ৫৯১ জন!
মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গত এক দশক ধরে বাংলাদেশে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিন বছরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ার সহ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৯১ জন। এরমধ্যে ৮৬ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) পরিচালিত এক গবেষণায় পৃষ্ঠা ২০ কলাম ১ এই তথ্য উঠে এসেছে।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি এসব ঘটনায় জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে সিজিএস। গতকাল সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘নির্বিচার প্রাণনাশ? বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ তথ্য জানানো হয়। ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ড. আলী রীয়াজ। সংস্থাটি জানায়, সাতটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের আলোকে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যার ক্ষেত্রে ২৫৯টি হত্যাকাণ্ডে পুলিশ এবং ১৬২টি হত্যাকাণ্ডে র?্যাব জড়িত ছিল। আর বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তির সংখ্যা কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি। যার সংখ্যা ২৩৮ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে- ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৯১ ব্যক্তি। এর মধ্যে ২০২০ সালের জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৯ জন মারা গেছেন। এসব বিচারবহির্ভূত হত্যার ৮৬ দশমিক ৬৩ শতাংশই ছিল বন্দুকযুদ্ধে।
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৬টিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলায় মারা গেছে সবচেয়ে বেশি ২৩৮ জন। আর ঢাকায় এরকম ঘটনা ঘটেছে ৫৮ জনের সঙ্গে।
সিজিএসের দাবি, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ঘটনায় পুলিশ এবং ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ ঘটনায় র্যাব জড়িত ছিল। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২১২ জন, র?্যাবের সঙ্গে ১৬৫ জন, বিজিবি’র সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ২০১৯ সালে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান ৩০৬ জন। গবেষণার এই সময়ে সর্বশেষ গত বছরের ১২ই ডিসেম্বরে সাতক্ষীরায় পুলিশি হেফাজতে বাবলু সরকার নামে এক ব্যক্তি মারা যান। আর সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের ২রা জানুয়ারি কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান সাইফুল নামের এক ব্যক্তি।
সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
এসময় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, এসব ঘটনায় র?্যাবের প্রতি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার পর দুজন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে রাষ্ট্র ও সমাজ টিকে থাকলে এগুলোর বিচার করতেই হবে।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও প্রধান নির্বাহী এডভোকেট এলিনা খান বলেন, বোঝাই যায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। শুধু নির্বাচনই নয় বিভিন্ন উৎসবের সময়েও লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত তারা পদক, পদোন্নতি পান। তাই তারা আরও বেশি এ কাজটা করেন।
সিজিএস’র প্রতিবেদনে এই সংকট মোকাবিলায় স্বাধীন কমিশন গঠন করে গত এক দশক ধরে চলা এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার প্রবণতা বন্ধসহ ৫ দফা সুপারিশ করা হয়।