দেশের পুঁজিবাজারে টানা কয়েক দিনের দরপতনের মুখে এই বাজারে জরুরি ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মঙ্গলবার এক জরুরি বৈঠকের পর পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে এই অর্থ ছাড় করেছে।
এছাড়া দরপতন ঠেকাতে শেয়ারের মূল্য পতনের নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই সীমা অনুযায়ী, কোনো শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ দুই শতাংশ কমানো যাবে এবং বাড়ানো যাবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সিদ্ধান্তে সাময়িক লাভ হতে পারে। কিন্তু কেন এখন শেয়ারবাজার অস্থির হয়েছে, সেই কারণগুলো চিহ্ন করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
তবে গত দু’দিনে দরপতন ঘটে বড় ধরনের।
তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও প্রথম ঘণ্টার লেনদেনেই ঢাকা শেয়ার বাজারে সূচক আগের দিনের তুলনায় এক দশমিক ৮৪ শতাংশ কমে যায়।
১০০ কোটি টাকার জরুরি বিনিয়োগ
এই দরপতনের মুখে সার্কিটব্রেকারে পরিবর্তন এনে বলা হয় যে কোনো শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ দুই শতাংশ কমানো যাবে এবং বাড়ানো যাবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
কর্তৃপক্ষের এই ঘোষণার ফলে মঙ্গলবার পরের দিকে সূচক কিছুটা বেড়েছে। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারেও একই ধরনের অস্থিরতা ছিল।
এই পরিস্থিতি সামলাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এক জরুরি বৈঠক করে ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।
কমিশনের একজন কমিশনার ড: শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেয়ারবাজার স্বাভাবিক করতে তারা এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন।
কিছু গুজবের কারণে কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে উত্তরণের জন্য এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে তাদের শেয়ার কম দামে বিক্রি করে দিয়ে অন্য কারো লাভের সুযোগ সৃষ্টি না করে, সেজন্য আমরা প্রথমত শেয়ারের মূল্য পতনের নতুন সীমা ঠিক করে দিয়েছি, বলেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ড. আহমেদ।
এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা আইসিবিকে দিয়েছে। আইসিবি এই অর্থ এখন শেয়ারবাজারে ব্যবহার করবে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আহমেদ উল্লেখ করেছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগে শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কতটা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে-এনিয়েও কমিশন বুধবার বৈঠক করবে।
পুঁজিবাজারে বার বার অস্থিরতার কারণ কী
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপে সাময়িকভাবে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ইয়াওয়ার সাঈদ বলেছেন, অস্থিরতার আসল কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া না হলে বার বার একই পরিস্থিতি হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, এর আগে ২০১৩ সালে বাজারে অস্বাভাবিক দরপতন হলে তখন থেকে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিয়ে আসছে। এই ঋণ নির্ভরতাকে সাঈদ অস্থিরতার বড় কারণ হিসাবে দেখেন।
এই বিশ্লেষকের মতে প্রথম কারণ- প্রকৃত বিনিয়োগকারী যারা নিজেদের সঞ্চয়ের অর্থ নিয়ে আসে, তাদের সংখ্যা কম। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর একটা বড় অংশই ঋণ নির্ভর, তারা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করছেন। ফলে বাজার পড়ে গেলে এই ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক তৈরি হয়। এটি বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করে।
আমাদের দেশে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সবসময় থাকে। যাদের এই কালো টাকা আছে, তাদের এই টাকার প্রতি কতটুকু মায়া আছে-সেটাওতো দেখতে হবে। তারা যখনই দেখছে, লাভ কমে যাচ্ছে, তখনই ধুম করে বিক্রি করে দিচ্ছে।
সাঈদ উল্লেখ করেন, এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এটি তাদের মূল ব্যবসা নয়। ফলে লাভ কমার ইঙ্গিত পেলেই ব্যাংকগুলো তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এটিও পুঁজিবাজারে সঙ্কটের অন্যতম কারণ।
এই মার্জিন ঋণের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের আলোচনাতেও আসছে বলে বলা হচ্ছে।
এছাড়া কর্তৃপক্ষ মনে করছে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ববাজারের অস্থিরতা নিয়ে নানা গুজব ছড়ানোর কারণে বড় দরপতন হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি