আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে: রিজভী
আওয়ামী লীগ সরকার জাতিকে নিষ্প্রাণ নিস্তেজ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘ভাষা শহীদ দিবসেও দানব বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব অব্যাহত আছে। ননসেন্স বক্তৃতায় অপরাজেয় আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতাদের আশকারাতেই যুবলীগ-ছাত্রলীগ নামধারী রক্তপিপাসু দল সৃষ্টি করা হয়েছে।’
গতকাল সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী ক্যাডাররা তাণ্ডব চালিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে বলে অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধ নিবেদনের সময় ঢাকা মহানগরীর উত্তর বিএনপি’র অন্তর্ভুক্ত বিমানবন্দর থানার সাংগঠনিক ওয়ার্ড, দক্ষিণ খান থানা, ৪৭ও ৪৯ নং ওয়ার্ড শাহআলী থানার ৮ নং ওয়ার্ড ও ৯৩ নং আঞ্চলিক ওয়ার্ড, রূপনগর থানার ৯২ নং ওয়ার্ডের প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের উপর পেছন দিক থেকে আওয়ামী ছাত্রলীগ, যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা আক্রমণ করে এতে রহিম ও আলাউদ্দিনসহ ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শুধ তাই নয়, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের সময় আওয়ামী লীগের অস্ত্রে-সস্ত্রে সুসজ্জিত একটি গ্রুপ হামলা চালায়। এতে আহত হয়েছেন ছাত্রদল সভাপতি শাহরিয়ার ফায়সাল, পৌরসভা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুলসহ ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। আহত নেতাকর্মীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে সেখানেও আওয়ামী ক্যাডাররা হামলা চালায়। তৎক্ষণিক তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গতকাল বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নানু’র উপস্থিতিতে ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন চলাকালীন পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী সশস্ত সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে হামলা চালিনো স্থানীয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী সহিংসতার কীর্তি পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে প্রকাশ পেলেও নিশিরাতের সরকার ভ্রুক্ষেপহীন। জাতিকে নিষ্প্রাণ নিস্তেজ করার জন্যই এই সকল দানবদের তৈরি করা হয়েছে। পতনের লক্ষণ প্রকট হয়ে উঠার কারণেই ওরা এখন মেতে উঠেছে। এরা এক ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চাচ্ছে, এই সত্যটি এখন দেশবাসী মর্মে মর্মে অনুভব করছে। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন করে এরা এক আজ্ঞাবাহী সংস্কৃতির জন্ম দিতে যাচ্ছে। তারই আলামত চারিদিকে ফুটে উঠেছে।
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আজ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করলো না। অবৈধ ক্ষমতার গরীমা আর অহমিকায় এরা এখন এতোটাই বেপরোয়া যে, বিরোধী স্বর শুনলেই ওরা নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরা জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে বলেই সন্ত্রাস, হামলা, আক্রমনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এরা গণতন্ত্রকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে যথেচ্ছাচার ব্যবহার করছে।
রিজভী আরও বলেন, বিশ্বে স্বৈরাচারের অতীতের সমস্ত নজির ভেঙে গোটা দেশকে ‘জয়বাংলা ফ্যাসিবাদের আস্তানা বানাতে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপি’র উপর প্রাণঘাতি আক্রমণ চালাচ্ছে। তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেলো আজ ভাষা দিবসে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর শহীদ মিনারে এবং গতকাল ঝালকাঠি জেলা সদরে বিএনপি কার্যালয়ে আওয়ামী ক্যাডারদের এই রক্তক্ষতি ঘটনা ‘জয়বাংলা ফ্যাসিবাদের আনুষ্ঠানিক অভিব্যক্তি।
এই নাৎসী সরকারের উৎখাতই এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই নাৎসী সরকারের উৎখাতই এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য। জনগণের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে অবিলম্বে এই সরকারের পতন না ঘটাতে পারলে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা ভয়াবহভাবে বিপন্ন হবে।