উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণও যাচ্ছে আমলাদের হাতে!
গত চার মাস ধরে মাসিক সভার কার্যবিবরণীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়াই স্বাক্ষরিত লিখে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ করেন, যা উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এবং উপজেলা পরিষদের (কার্যক্রম বাস্তবায়ন) বিধিমালা, ২০১০-এর পরিপন্থী। তিনি সভার কার্যবিবরণীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর না করার বিষয়টি উপজেলা পরিষদকে জানাননি এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিক অথবা লিখিতভাবেও অবহিত করেননি। তার এরূপ আচরণ সরকারি কর্মচারীর পক্ষে শিষ্টাচারবহির্ভূত, কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন এবং আইনসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অবজ্ঞাকরণ তথা অসদাচরণের শামিল। এমন তথ্য উঠে এসেছে খোদ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের চিঠিতে।
এমন অবস্থা শুধু কুমিল্লায় নয়, সারা দেশের উপজেলা চেয়ারম্যানদের এভাবেই অবহেলা করেন আমলারা। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মাঠ প্রশাসনে জনপ্রতিনিধি এবং আমলাদের দূরত্ব বাড়ছে। জনপ্রতিনিধি থেকে দিন দিন উপজেলা পরিষদের কর্মকাণ্ড চলে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) হাতে। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন চেয়ারম্যানরা। এবার উপজেলা পরিষদের ফাইন্যান্স অফিসারের পদটি দখলে নিতে চান আমলারা।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলা পরিষদের পুনর্গঠন ১৩ বছর হয়ে গেছে। এখনো সরকার ফাইন্যান্স অফিসার নিয়োগ দিতে পারেনি। কেন পারছে না বা কারা উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী হতে দিচ্ছে না এটা সরকারকে খতিয়ে দেখা দরকার। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের ফাইন্যান্স অফিসারের কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এখন এসিল্যান্ডদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এই দায়িত্ব দিলে তাদের চাপ আরো বেড়ে যাবে। এই পদে সহকারী কমিশনার ভূমিকে (এসিল্যান্ড) দায়িত্ব দিলে মানুষের হয়রানি আরো বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. মোসলেহ উদ্দীন বলেন, প্রাথমিকভাবে এরশাদের সময় উপজেলা পরিষদে ফাইন্যান্স অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাজের পরিধি অনেক। তাদের সেই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্থানীয় সরকার হবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি আমাদের সংবিধানের চেতনা। উপজেলা পরিষদে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।