পাল্টে গেছে প্রতারকদের প্রতারণার কৌশল
সারাদেশে পাল্টে গেছে প্রতারণার কৌশল। প্রতারকরা বিভিন্ন ভাবে মানুষকে ঠকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। কেউ কেউ আবার একই ভাবে বারবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। জয়পুরহাট জেলার মো. বাঁধন হোসেন (১৯)। সবেমাত্র এসএসসির গন্ডি পার হয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন অভাবের সংসার। মনে মনে ভেবেছেন বড় হয়ে বাবার সংসারের হাল ধরবেন। সেজন্য পত্রিকার পাতায় বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন দেখেন তিনি। একদিন এক বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায় তার।
দেখেন কোনো প্রকার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়ায় মাত্র এসএসসি পাশে মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি। ছুটে আসেন গাজীপুরের বোর্ডবাজারে লাইফওয়ে নামের একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানে। এসেই দু’দিন ট্রেনিং করার পর পড়েন বিপত্তিতে। পরে জানানো হয় চাকরি পেতে হলে জামানত বাবদ অগ্রিম দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে, রাজধানীর আশপাশজুড়ে বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়েও গড়ে উঠছে প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্যরা। চাকচিক্য অফিস, আর চটকদার বিজ্ঞাপনকে পুঁজি করে লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল ও অল্পশিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের আকৃষ্ট করছে। পরে এসব ছেলে-মেয়েদের ফাঁদে ফেলে কয়েকটি প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে মোটা টাকা।
এমন এক অভিযোগকারী হোসেন মিয়া বলেন, ‘আমি খুব গরীব ঘরের ছেলে। বাবা ভ্যান চালিয়ে আমাদের তিন ভাই-বোনকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন। আমিই সবার বড়। চাকরির খোঁজ পেয়ে গ্রাম থেকে আসি গাজীপুরের বোর্ডবাজারে। দুই দিন ট্রেনিং করার পর আমাকে বলে জামানত হিসেবে ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। জামানতের টাকা তিন মাস পর ফেরত দেয়া হবে। এখন আর ফেরত দিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, চাকরির বিষয়টি বাড়িতে জানালে একটা গরু বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা দেন। আমি সেই টাকা দেয়ার পর তাদের আচরণ বদলে যায়। কোনো কাজ নেই। সারাদিন শুধু ট্রেনিং করায় আর বলে এখানে মানুষ নিয়ে আসাটাই চাকরি। বুঝতে পারলাম প্রতারণার শিকার হয়েছি। পরে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রতারকদের প্রতারণার নানান কৌশল রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিতে কৌশল পরিবর্তন করে চলেছে একের পর এক প্রতারণা। প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু অতিরিক্ত লোভের বসে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই।
বিভিন্ন ভাবে প্রতারণার কৌশলে কাজ করে প্রতারক চক্র:-
অভাবের সংসারে অবদান রাখতে চেয়ে ছিলেন আবুল হোসেন রাসেল, এজন্য পত্রিকায় লোভনীয় ও চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ছুটে আসেন ঢাকার মিরপুরের পল্লবী এলাকায়। সেখানকার ‘আরভিটা সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডে’ থাকা-খাওয়া ট্রেনিং বাবদ অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হন তিনিও। প্রতারণার শিকার হন একই এলাকার আল আমিন ও ফরহাদ নামের দুই যুবক।
এক মহিলা যাত্রী রিকসায় ফেলে গেছে গহনা এমন প্রতারণা বেড়েছে:-
আহমেদ রিকশা করে ফার্মগেট থেকে বসুন্ধরা সিটিতে শপিং করতে যাচ্ছিল সে। হঠাৎ রিকশাচালক নিরিবিলি এক জায়গাতে থামিয়ে একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করে, বলেন একজন ফেলে গেছে এই গহনাটি। এক ভরির ওপরে হবে। ১১ হাজার টাকা দিয়ে কিনেন সে। পড়েন প্রতারণায়।
আরেক ব্যক্তি রবিন প্রতারণা শিকার হয়ে বলেন, গহনা ভেবে চেইন গিনেছি ২০ হাজার টাকা দিয়ে পরে দেখি এটা সিটি গোল্ড।
ফার্মগেটে ডলারের নামে প্রতারক চক্র সক্রিয়:-
ফার্মগেটে হাঁটছে শিহাব নামের এক যুবক। পাশে থাকা এক লোক কথা বললে তার কাছে কাছে ২০ ডলার আছে। তাই ইমার্জেন্সি টাকা দরকার। মাত্র ৫০০টাকা দিলেই হবে। অনেক টাকা লাভের আশায় ৫০০টাকায় নেয় সে। পরে সে বলে এটা জাল পুলিশ ধরবে, আমি পরে রাস্তায় ফেলে দিলাম।
এসব প্রতারণার বিষয় নিয়ে যা বলল পুলিশের বিশেষ শাখা সিআইডি:
জানতে চাইলে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জিসানুল হক বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অনলাইনে নিয়োগ বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এমন অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আসে, কিছু প্রতারককে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসি।
তিনি আরো বলেন, তবে আগের থেকে প্রতারণা কিছুটা কমছে। সাধারণ এই চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নিত্য নতুন কৌশল পরিবর্তন করে প্রতারণা করছে।