চুরির অপবাদে দুই শিশুর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালালেন ইউপি সদস্য
রংপুরের কাউনিয়ায় টাকা চুরি সন্দেহে শামীম হোসেন (১০) ও রাসেল (৯) নামে দুই শিশুর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন এক ইউপি সদস্য ও অভিযোগকারী দুই ভাই। খবর পেয়ে নির্যাতনের শিকার শামীমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে নিজ বাড়িতে শামীমসহ পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও তার লোকজন।
তবে বুধবার সন্ধ্যায় রাসেলকে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শামীম কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের রাজিব মোল্লাটারী গ্রামের সামসুল হকের এবং রাসেল ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চৈতারামোড় বাজেমজকুর গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে।
শামীমের মা সোহাগী বেগম জানান, সংসারে অভাবের কারণে শামীম একটি পিকআপে সহকারী হিসেবে কাজ করে। চারদিন পর মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে নাওগাঁ থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়া শেষে গাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে লোকমুখে জানতে পারেন ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার ছেলের হাত-পা বেঁধে পেটাচ্ছে।
পরে তিনি জানতে পারেন যে, মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকার আকরাম হোসেন নামে এক ব্যক্তির ঘরের সিঁধ কেটে ৭০ হাজার টাকা কে বা কারা চুরি করেছে। এ ঘটনায় আকরাম এবং তার ভাই ইয়াকুব ও ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার ছেলেকে সন্দেহ করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে খবর পেয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশ ওই বাড়ি থেকে শামীমকে উদ্ধার করে। কিন্তু তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করতে গেলে ইউনুস মেম্বারের লোকজন সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেলে সেখানে পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে আকরাম ও ইউনুস মেম্বারের লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
রাসেলের বাবা মন্তাজ আলী জানান, বুধবার সকালে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন যে, দুটি মোটরসাইকেলে করে ইউসুফ মেম্বারসহ ৪-৫ জন লোক এসে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং বেধড়ক মারধর করে। এ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু রাসেল জানায়, অনেক আকুতি মিনতি করেও মেম্বারের নির্যাতন থেকে রক্ষা হয়নি। টাকা চুরি করিনি বলার পরেও তাকে এবং শামীমকে বেঁধে পিটিয়েছেন মেম্বার এবং আকরাম ও ইয়াকুব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ইউপি সদস্য কারণে অকারণে বিভিন্ন বয়সী শিশু ও মানুষদের ধরে এনে মারধর করেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।