ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন: পোলিং এজেন্ট নিয়োগ বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ

0

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

তাদের অভিমত- ভোট পাহারা দিতে সক্ষম পোলিং এজেন্ট দিতে না পারলে সব চেষ্টাই ভেস্তে যাবে। অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। বিগত সিটি এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ কেন্দ্রেই বিএনপির কোনো এজেন্ট চোখে পড়েনি। কেন্দ্রে ‘অনিয়ম’ হলেও তা দেখার মতো কেউ ছিল না।

এমন বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট নিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে হাইকমান্ড। ভোটকেন্দ্রে যে কোনো ধরনের কারচুপি ও অনিয়ম ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন- এমন যোগ্যতাসম্পন্ন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, সব ধরনের আশঙ্কার কথা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৫০ হাজার পোলিং এজেন্ট নিয়োগের সম্ভাব্য তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে হয়রানি করার সুযোগ না পায়, সেজন্য তালিকা সংগ্রহে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে।

যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে কিংবা গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা আছে, এমন নেতাকর্মীকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে না। দুই সিটির পোলিং এজেন্টের তালিকায় বিকল্প টিমও স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে।

সম্ভাব্য তালিকা চূড়ান্ত করে তাদের সবাইকে ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয়সহ ভোট কারচুপি প্রতিরোধ করার বিভিন্ন কলাকৌশল শেখাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও করা হবে লিখিত আবেদন।

ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড রয়েছে। সেখানে থাকবে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্রে ৭ হাজার ৮৪৬টি ভোটকক্ষ। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্রে ৬ হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ থাকবে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও উত্তর সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের দিন যাতে কেউ ভোটকেন্দ্রে কারচুপি বা অনিয়ম করতে না পারে, এ বিষয়টি এখনই আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি ক্ষমতাসীনদের বাধার কারণে অনেক কেন্দ্রেই আমাদের এজেন্ট ঢুকতে পারেনি। কোথাও কোথাও আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাও ছিল।

অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার পোলিং এজেন্ট নিয়োগে আমরা বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। যারাই পোলিং এজেন্ট হবেন, তাদের অবশ্যই কেন্দ্রে যেতে হবে। একমাত্র গ্রেফতার ছাড়া ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বা আসতে দেয়নি- এমন কোনো অজুহাত এবার বরদাশত করা হবে না।

তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার শঙ্কা থাকার পরও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হবে বলে মনে করি না। কারণ রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী রয়েছেন। সংশয় হচ্ছে ক্ষমতাসীন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ঠিকমতো কাজ করতে দেবে কি না।

ঢাকার দুই সিটিতে ভোটকক্ষের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৩৪টি। প্রতি কক্ষে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে। সবমিলে দুই সিটিতে ৪৩ হাজার ৩৩২ জন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে।

এত বিপুলসংখ্যক সাহসী এবং নিবেদিত স্থানীয় নেতাকর্মী মিলবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে দলে। কারণ সক্রিয় নেতাকর্মীদের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। এমন পরিস্থিতিতে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বা গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে, তাদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ না দেয়ার পক্ষে দলটির নীতিনির্ধারকরা।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ভোট যত ঘনিয়ে আসবে, সরকার নানাভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করবে বলে আমাদের আশঙ্কা। ইতিমধ্যে এর নমুনা শুরু হয়েছে।

মিথ্যা মামলায় আরও অনেককে গ্রেফতার ও ভয়ভীতি দেখানো হতে পারে। তারপরও চেষ্টা থাকবে এলাকায় যারা পরিচিত এবং প্রভাবশালী, তাদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার। ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। এছাড়া চূড়ান্ত তালিকা করার পর তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

সূত্র জানায়, পোলিং এজেন্টের নামের তালিকা সংগ্রহ করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়ে তারা প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে সম্ভাব্য তালিকা পাঠাতে বলেছেন।

এছাড়া যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও আলাদা তালিকা দিতে বলা হয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালনে আগ্রহী, তাদের এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তালিকায় প্রয়োজনের চেয়েও কিছু বেশি নাম রাখবে দলটি। কেউ অসুস্থ বা সমস্যায় পড়লে যাতে বিকল্প কাউকে নিয়োগ দেয়া যায়।

এজন্য কাছাকাছি একটি বিকল্প সেট প্রস্তুত রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, পোলিং এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আশপাশে যেসব নেতাকর্মীর বাসা রয়েছে, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

কারণ স্থানীয়ভাবে প্রভাব রয়েছে- এমন কাউকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া না হলে কেন্দ্রে যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাবে না। তাই হামলা-মামলার কারণে সব ভোটকক্ষে সম্ভব না হলেও অন্তত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রভাবশালী পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যাতে তার ওপর ভিত্তি করে অন্য পোলিং এজেন্টরা নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তাই স্থানীয়দের মোটামুটি চেনেন, সেসব নেতাকর্মীকেই পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com