‘আমাদের চোখের পানি নিয়ে এমপি-মন্ত্রীরা উপহাস করে’

0

আমাদের চোখের পানি নিয়ে এমপি-মন্ত্রীরা উপহাস করে, হাসে। তারা বলে আমাদের স্বামীরা বিয়ে করে অন্য কোথাও চলে গেছেন। দেশে নাকি গুম নেই। আমাদের কথা কি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায় না, আমাদের জন্য কি কারো মন কাঁদে না। আমরা প্রতিমহূর্তে মরে যাচ্ছি। আমরা জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি। আমাদের মুখে কখনও হাসি আসে না।

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) প্রেসক্লাবে “মায়ের ডাক” আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলছিলেন কাঠ ব্যবসায়ি ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসিমা আক্তার স্মৃতি।

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমাদের ঘরে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। আমার বাচ্চারা জিজ্ঞেস করে, সবার তো বাবা আছে আমাদের বাবা নেই কেন। আমি উত্তর দিতে পারি না। আমার স্বামীকে মেরে ফেললে তার মরদেহটা দেন, আমরা মাটি দেব। আমরা একটু মিলাদ পড়াতে চাই। আর বেঁচে থাকলে সেই তথ্যটা আমাদের দেন তিনি কোথায় আছেন।’

২০১৯ সালের ১৯ জুন কাঠ ব্যবসায়ি ইসমাইল হোসেন বাতেনকে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে র‌্যাব-৪ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন থেকে তিনি নিখোঁজ আছেন।

বাতেনের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। র‌্যাবের বিরুদ্ধে থানায় জিডি পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ৩ বছর পর এসে পুলিশ প্রশ্ন করে, আমার স্বামী গুম হয়েছে এটা সত্য না মিথ্যে?

তিনি বলেন, এসব শোনার পর প্রশাসনের ওপর, পুলিশের ওপর, আইনের ওপর আস্থা থাকে না। এ দেশে কোনো আইন নেই, কোনো শাসন নেই। আমরা র‌্যাবের কাছে আজ জিম্মি।

রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে গুম হওয়া পারভেজের স্ত্রী ফারজানা বলেন, আমার স্বামীকে গুম করার পর এখন আমাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। নিয়মিত আমাদের বাসায় পুলিশ আসে। কিছুদিন আগের এক আওয়ামী লীগের নেতাসহ পোশাক পরিহিত একজন এবং পোশাক ছাড়া বেশ কয়েকজন পুলিশ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের বাসায় আসে। আমি বাসায় ছিলাম না। আমার শাশুড়িকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে শাশুড়ির ফোন থেকে আমাকে কল দেয় পুলিশ। আমাকে থানায় দেখা করতে বলে। আমি যেতে অস্বীকার করলে আমাকে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলে। এভাবে প্রতিনিয়তই আমাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমার শাশুড়িকে বলেন যে, আপনার ছেলের বউ আপনার কাছ থেকে ছেলেকে আলাদা করে রেখেছে। সে জানে আপনার ছেলে কোথায় আছে। এভাবে আমাদের মানসিক নির্যাতন করছে পুলিশ।

মায়ের ডাক আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুম হওয়া লক্ষ্মীপুরের ফরিদ আহমেদ রাজুর বোন শিল্পী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গুম হওয়া আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলীসহ গুম হওয়া বেশ কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com