খালেদা জিয়ার কেবিনে ‘কান্নার রোল’

0

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গতকাল রবিবার সাক্ষাৎ করেছেন তার ঘনিষ্ঠ স্বজনরা। তাদের মধ্যে ছিলেন খালেদা জিয়ার বোন বেগম সেলিমা ইসলাম, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, কোকোর ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমান, খালেদা জিয়ার নাতি সামিন ইসলাম, রাখিন ইসলাম ও নাতনি আরিফা ইসলাম। বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কেবিনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সময় কাটান তারা। কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও তার ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমান কেবিনে ঢুকেই খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। একে একে অন্যরাও অঝোরধারায় কাঁদতে শুরু করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। সব মিলে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কেবিনে কান্নার রোল ওঠে এবং তা বাইরে থেকেও শোনা যাচ্ছিল। এ সময় খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম তাদের সবাইকে শান্ত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার স্বজনদের একজন গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানান।

এদিকে কেবিন থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনো গাড়িতে বসে কাঁদতে দেখা যায় সিঁথি ও জাহিয়াকে। সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনরা সাক্ষাৎ করেছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের ওই স্বজন বলেন, শর্মিলা ও জাহিয়া রহমান খালেদা জিয়ার জন্য ফুলের তোড়া নিয়ে গিয়েছিলেন। এছাড়া তার জন্য নতুন কিছু শীতের কাপড় নিয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় খালেদা জিয়া তার নাতি জাহিয়া ও পুত্রবধূ সিঁথির কাছে লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও সদ্য ব্যারিস্টার হওয়া তারেক-জোবাইদার মেয়ে জাইমা রহমানের খোঁজখবর নেন।

‘কিছু খেলেই বমি করছেন’ : খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে কেবিন ব্লকের নিচতলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তার বোন সেলিমা ইসলাম। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন। সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়েছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কিছু খেতে পারছেন না। খেলেই আবার তা বমি করে ফেলে দিচ্ছেন। তিনি জানান, গতকাল ডাক্তার খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন। তারা প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছেন। কিন্তু তারা যে ওষুধ দিচ্ছেন তাতে স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। জামিনের বিষয়ে খালেদা জিয়া স্বজনদের কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘সেদিন তো আদালতে জামিনের শুনানি হলো। কিন্তু আদালত জামিন দেয়নি। সরকার তাকে জামিন না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার যে চিকিৎসা দরকার এখানে সে চিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসা না হলে কেমন করে বাঁচবে সে?’ তিনি বলেন, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। গতকাল তার ফাস্টিং (খালি পেটে সুগারের পরিমাণ) ছিল ১৮। তার হাত বাঁকা হয়ে গেছে। হাত সোজা করতে পারছেন না। হাঁটু ফুলে যাওয়ায় তাতে ব্যথা রয়েছে। এজন্য তিনি পা ফেলতে পারছেন না।

‘নিয়মিত স্বজনদের দেখা পেলে মানসিক শান্তি পেতেন’: খালেদা জিয়া জনগণের উদ্দেশে কোনো বার্তা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘ম্যাডাম আপনাদের ও দেশের জনগণের কাছে দোয়া চেয়েছেন।’ এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা তো সহজে পারমিশন পাই না। অনেক বলার পর আমরা অনুমতি পাই। আমরা কাছে গেলে ওনার ভালো লাগে। মানসিক প্রশান্তি পান। এক থেকে দেড় মাস লেগে যায় পারমিশন পেতে পেতে।’ উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে খালেদা জিয়া কোনো কিছু বলেছেন কি না এমন প্রশ্নে সেলিমা ইসলাম বলেন, রোগী অসুস্থ, রোগী তো উন্নত চিকিৎসা চাইবেনই। তার সুস্থ হওয়ার জন্য উন্নত চিকিৎসা খুবই জরুরি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com