দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অনির্বাচিত সরকার পতনে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান বিএনপির
এদিন রংপুরের গঙ্গাচড়া বুড়িরহাট ঈদগাহ মাঠে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশের চিকিৎসা দেয়ার দাবিতে রংপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে গণআন্দোলনের মাধ্যমে জেলের তালা ভেঙে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চান না, দেশের প্রত্যেকটি শ্রেণি-পেশার মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। কিন্তু সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় করে বলেই আইন থাকা সত্ত্বেও তাকে মুক্তি দিচ্ছে না।
সমাবেশে পুলিশের বিরুদ্ধে চারটি রুটে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। বলেন, ‘বাধা দিয়ে জনতার স্রোত আটকে দেয়া যাবে না বরং বাড়বে। সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই বলেই প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মী এবং জনসাধারণকে দমিয়ে রাখতে চায়। এই সরকারের আর সময় নেই এখন প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলেও সেনাবাহিনীকে কলঙ্ককারী সাবেক সেনাপ্রধানের খুনি ভাইকে মুক্তি দিয়েছে। দেশের মানুষ সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ। তাদেরকে আর ক্ষমতায় চায় না জনগণ।’
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে দেশের মানুষ আপনাদের ছাড়বে না।’
এছাড়াও এদিন বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপির গণসমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘স্লোগান নয়, এখন অ্যাকশনের সময়। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
সমাবেশে গয়েশ্বর রায় বলেন, রামপালের পাশেই সুন্দরবন। যুগ যুগ ধরে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। আর এই সুন্দরবন ধ্বংস করার জন্য কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে বলে পণ করেছে। এই প্রযুক্তি ভারতের। কিন্তু ভারত সরকারের প্রযুক্তি ভারতবর্ষে স্থাপনের অনুমতি দেয় না। সেইটা আমাদের দেশে করছে। আজকে দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য, পরিবেশের বিপর্যয় নানাবিধ কর্মকাণ্ড করছে। আর তড়িঘড়ি করে বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এতো টাকা যদি বিদেশে থাকে তাহলে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল মাত্র ৭৫০ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে। ৫০ বছর পর ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এই টাকাগুলি কার? এই টাকা আমাদের ফেরত আনতে হবে।
এদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশে সরকার পতন আন্দোলনে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকারের দেওয়া ১৪৪ ধারার দিন শেষ হয়ে গেছে। দফায় দফায় অনুমতি নিয়ে জনসভার দিন শেষ হয়ে গেছে।’
জান গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ মঞ্চ ভেঙে পড়ে। তিনি বক্তব্য দেওয়া বন্ধ রাখেননি।
আমীর খসরু তার বক্তব্যে বলেন, ‘দক্ষিণ জেলার আজকের সমাবেশ বাঁধ ভেঙেছে সরকার পতন আন্দোলনের। কিছুতেই জনগণকে আটকে রাখা যাবে না। এত লোকের সমাবেশ মঞ্চ তো ভাঙবেই। আন্দোলন বন্ধ হবে না, চলতে থাকবে। ১৪৪ ধারার দিন শেষ হয়ে গেছে। দফায় দফায় অনুমতি নিয়ে জনসভার দিন শেষ হয়ে গেছে। দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ।’
এছাড়াও এদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগের দাবিতে সিলেট শহরতলির টুকেবাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনের বাইরে রাখতেই ষড়যন্ত্রমূলক মামলার ফরমায়েশি রায়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। আর কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি রাজপথের আন্দোলনেই ফয়সালা হবে। প্রয়োজনে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করতে হবে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাবন্দি উল্লেখ করে টুকু বলেন, খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত যত জায়গা থেকে যতটা নির্বাচন করেছেন সবগুলোতে জয়লাভ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে যিনি বন্দি করে রেখেছেন তিনি নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা ও মেজর মান্নানের কাছে পরাজিত হয়েছেন। পরাজিত হওয়ার পরে ঢাকায় আর নির্বাচন করেননি। জাতি সেই ইতিহাস ভুলে যায়নি।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন করেন। দেশে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। সাহস থাকলে একবার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন। নৌকার প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।