ইভিএমে নিঃশব্দে কারচুপি হবে, হইচই হবে না: ফখরুল
ইভিএমে ভোট গ্রহণের সমালোচনা করে বিএনপি বলছে, নির্বাচন কমিশন ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিঃশব্দ ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এটাকে তারা ‘ভোটধিকার হত্যার নিঃশব্দ প্রকল্প’ বলেও উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া বিএনপি অভিযোগ করে বলেছে, সরকার–দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দিতেই ইভিএমের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা জানান। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে বলেন, সারা বিশ্বের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)’ বিতর্কিত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রে সেই ইভিএম ব্যবহারের একতরফা ব্যবস্থা নিয়ে ডিজিটাল কারচুপির এক নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৩০ জানুয়ারির ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নূরুল হুদা কমিশনের নেতৃত্বে ইভিএম ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের যেকোনো নির্বাচনে “প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটাধিকার হত্যার এক নিঃশব্দ প্রকল্প” বাস্তবায়নের দুরভিসন্ধি মাত্র।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার কমিশন ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিঃশব্দ ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে, যাতে রাতে বা দিবালোকে ভোট ডাকাতির মতো কোনো হইচই থাকবে না। সবাই দেখবে ,সব ঠিকমতো চলছে; কিন্তু ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে অতি সহজভাবে ভোট ডাকাতি সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’
২০১৭ সালে ইসির আমন্ত্রণে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে একটি সংলাপে অংশ নিয়েছিল। তার উল্লেখ করে বিএনপি জানায়, সে সময় ২৩টি দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছিল। বিএনপিসহ ১২টি দল সুস্পষ্টভাবে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত প্রদান করে। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার বিভিন্ন সময়ে ইভিএম সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরেন। সব দল না চাইলে ইভিএম নয়—সিইসির এমন বক্তব্য উল্লেখ করে বিএনপি বলছে, এরপরও ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত একজন সাংবিধানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সিইসির ধারাবাহিক সংবিধান লঙ্ঘনের রেকর্ড।
ভোটাররা ইভিএম প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত নন এবং সেভাবে যথাযথ প্রশিক্ষণও পাননি দাবি করে ফখরুল বলেন, ইভিএম ভোটারবান্ধব পদ্ধতি নয়। ভোটাররা কাগুজে ব্যালট ব্যবহারেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। দলটি আরও অভিযোগ করেছে, ইভিএমে ভোটার অডিট ট্রেইল না থাকায় ভোটার বুঝতে পারবেন না তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন। এটাকে শুভংকরের ফাঁকি বলে বিএনপি উল্লেখ করে। তারা আরও জানায়, বিএনপি একটি বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক ও প্রযুক্তিবান্ধব রাজনৈতিক দল। কিন্তু যে প্রযুক্তি ব্যবহারে এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হয়, সে প্রযুক্তির ব্যবহার বিএনপি চায় না।
বিএনপি অভিযোগ করে, ইভিএমে ব্যয় সংকোচনের যুক্তি ভিত্তিহীন। ইভিএম প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইভিএম প্রকল্পে সরকারি দলের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী মহলের যোগসাজশ রয়েছে। ভোট ডাকাতির সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের পরিকল্পনা রয়েছে বলে দাবি করে তারা।
তারা আরও জানায়, স্বল্পমাত্রায় ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে যেসব নির্বাচন হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপির অভিযোগ, ইভিএম আগে থেকেই এমনভাবে ক্যালিব্রাইট বা প্রস্তুত করা যেতে পারে, যাতে ভোটার যেকোনো প্রার্থীকে ভোট দিলেই তা কোনো পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীর পক্ষে রেকর্ড হয়ে যাবে। উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে এটি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করারও সমালোচনা করে বিএনপি বলে, এর খেসারত জনগণকে দিতে হচ্ছে। গত বছরে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিএনপি বলছে, ডেঙ্গু ব্যর্থতায় ভোট প্রচারে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে প্রার্থী ‘ভাড়া’ করেছে।
ইভিএম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কাউকে নিয়ে গিয়ে দেখা আসা যাবে—সিইসির এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিইসির বক্তব্য ধোপে টেকে না। ইভিএমের এই সিস্টেমেই কারচুপির বহু সুযোগ রয়েছে।’
ভোট সুষ্ঠু না হলে এই ইসির অধীনে এটাই বিএনপির শেষ নির্বাচন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল, নির্বাচনে বিশ্বাস করি। ওই ধরনের কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি।’
সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ।