জনগণ ফুসে উঠেছে, এবার কোন ছাড় নয়, অবৈধ সরকারের পতন হবেই ইনশাআল্লাহ: বিএনপি
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনেই সরকারের পতন ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা আব্বাস। তাই ক্ষমতাসীন দলকে ইঙ্গিত করে পালানোর আগে পাসপোর্ট পরীক্ষা করে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কিশোরগঞ্জ শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলছিলেন মির্জা আব্বাস।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এ সরকার দিন গুণছে, কবে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু হবে। তার মৃত্যু হলেই সরকারের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হবে। কিন্তু জনগণ ভুল করবেনা। আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ এ সরকারের পতন ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেই। তিনি বলেন, জনগণ ফুসে উঠেছে। এবার কোন ছাড় নয়। সরকারের পতন হবেই ইনশাল্লাহ।
তিনি এ সরকারকে নিশিরাতে ভোট লুটের সরকার উল্লেখ করে বলেন, এ সরকারের কাছে জনগণের কোনো মূল্য নাই। এ সরকারের কাছে জনগণ কিছু আশা করতে পারে না।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি মানুষের ভালোবাসা এ সরকার সহ্য করতে পারছেনা। এ কারণেই সুচিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে পাঠাতে দিচ্ছেনা। তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় বলেই এ সরকার তাকে হত্যা করতে চায়। আর শুধুমাত্র হত্যা করার উদ্দেশেই তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে মুক্তি দিয়ে সরকার গোপনে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়, অথচ মানুষের আবেগ ভালোবাসার নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছেনা। এর পরিণতি ভালো হবেনা।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এই চাটার দলকে ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারলে দেশ, জনগণ ও স্বাধীনতা নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এবার জনগণকে নতুন সরকার দেখাব ইনশাআল্লাহ।
এদিন বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি কখনো পরাজিত হয়নি, হবেও না। হাসিনার পতন অবধারিত। শুধু সময়ের ব্যাপার।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা কখনো খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিবেন না। চিকিৎসাও করাতে দিবেন না। বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অস্থিরভাবে আগ্রহ করছেন তিনি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পথে বাধা শেখ হাসিনা। যদি বাধা হয়ে থাকে তাহলে শেখ হাসিনাকে আগে সরাতে হবে। তাহলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। খালেদা জিয়া পছন্দমত চিকিৎসা নিতে পারবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। এমনকি আওয়ামী লীগের শতকরা ৯০ জন লোক শেখ হাসিনার এই বাড়াবাড়িকে পছন্দ করছে না।
কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যখন কারাগারে যাই তখন কারাগার কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে কানে কানে বলে, ‘আমরা যত ভাল খাবারই দেই সেটা খাবেন না।’ জেলখানায় স্লো পয়জনিংয়ের বিষয়টা ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে।’
আওয়ামী লীগের পালানোর জায়গা নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে মুরাদ নামের একজন কানাডায় গিয়েছিলেন। বিভিন্ন এয়ারপোর্ট ঘুরে ফেরত আসছে। কেউ জায়গা দেয়নি। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সমস্ত নেতার এই অবস্থা হবে। কোথাও জায়গা হবে না। কোন জায়গায় ঠাই পাবে না। সেই কারণে শেখ হাসিনাকে বলবো জায়গা যখন বিদেশে পাবেন না, পালানোর চেষ্টা করা তো দরকার নাই। দেশেই যদি থাকতে চান তাহলে খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চান। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান। দেশের মানুষের অধিকার ফেরত দেন। জনগণের সাথে একটু সমঝোতা করেন।
এছাড়াও এদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর আউটার স্টেডিয়ামে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপির আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সারা দেশে আন্দোলনে বিএনপির গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জেতার আগে এ আন্দোলন ছেড়ে আমরা মাঠ থেকে উঠব না। জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। দেশকে মুক্ত করতে হবে। এ সংগ্রামে জিততে হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
আমীর খসরু আরও বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। এমন আন্দোলন করব খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সরকার বাধ্য হবে। ভোট ডাকাতের সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। এ সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতায় বসে আছে। আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের পতন ঘটানো হবে।
এদিকে একই দিনে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার মধ্যেই সিরাজগঞ্জের সরকারী ইসলামীয় কলেজ মাঠে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার দাবীতে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আমি রাজনীতিতে জীবন দিতে রাজি আছি, কেননা জীবনবাজী রেখে এদেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছি, কাজেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া না হলে প্রয়োজনে তাকে মুক্ত করতে ৭১’র মতো যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং রনাঙ্গনের সৈনিক হিসেবে রাজপথে যুদ্ধ করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। সেদিন বেশি দুরে নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্ত করে আনবে ইনশাল্লাহ্।
তিনি বলেন, আ’লীগ জিয়াউর রহমানের নাম নিতে এখন লজ্জা পায়, তারা গণতন্ত্রের ওয়াদা দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল অথচ জিয়াই এদেশে গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দিয়েছিলেন। কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন, গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার কারণে দেশ এগিয়ে গেছে। তারা উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে শোষন করছে, দেশের মানুষের অবস্থা খুব খারাপ, বাজারে গিয়ে দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্তরা দিশেহারা হয়ে পরেছে। তারা গণতন্ত্রকে ভয় পায় বলেই দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে নিয়েছে। এ সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার, এ অবৈধ সরকারের দিন শেষ হয়ে গেছে। বাংলার জনগণ এ সরকারকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে ইনশাল্লাহ।