মুক্তিযুদ্ধে আ.লীগের ইতিহাস পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ আর ভারতে পালিয়ে যাওয়া: ফখরুল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবারো দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্তিযোদ্ধা হবেন না তো কে মুক্তিযোদ্ধা হবেন? যারা পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল আর ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা মুক্তিযোদ্ধা হবেন?
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ঠাকুরগাঁও পাবলিক ক্লাব মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ প্রশ্ন রাখেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার তাড়াতাড়ি বিদায় করতে না পারলে দেশের মানুষ শান্তি পাবে না। নিশিরাতের সরকার ভোট চুরি করাই তাদের স্বভাব। মিড নাইট সরকার জনগণের সরকার হতে পারে না। জনগণকে আর বোকা ভাববেন না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে। সকালে জনগণ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, এর আগের নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। তখনো একটি সংলাপ করেছিল। এখন আবারো সংলাপের জন্য ডাকাডাকি করছেন রাষ্ট্রপতি। এ সংলাপ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। নির্বাচন কমিশন সমস্যা নয়, সমস্যা সরকারের ভেতরে। নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে? নিরপেক্ষ সরকার থাকবে, নাকি শেখ হাসিনার সরকার থাকবে? যদি শেখ হাসিনার সরকার থাকে তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।
‘অবৈধ এই সরকার জনগণকে ভয় পায়’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারি বাহিনী দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গুম করে দিয়েছে সরকার। তাদের আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আর ৩৫ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে নিশিরাতের এ সরকার।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়ার দেশে ফেরা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ঘরে ফিরে যাবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১৯৮১ সালে অনেকে ভেবেছিলেন জিয়ার দল বিএনপি থাকবে না। তখন গণতন্ত্র রক্ষায় খালেদা জিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছিলেন। তবে মিডনাইট ইলেকশন নয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দেশে নির্বাচনের আয়োজন করে বিএনপি।
তিনি বলেন, প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এখনো হাসপাতালের বেডে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। সারা দেশের মানুষের দাবি, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হোক। কিন্তু এই দাবি সরকারের কানে যায় না। যদি খালেদা জিয়ার কিছু ঘটে, তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে- দৃঢ় কণ্ঠে বলেন ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশের সব সুন্দর ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। গুম, খুন, হত্যা ও অপহরণের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন।
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেওয়া এবং মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, খালেদা বর্তমান সরকারের সময়ে পুলিশ বাহিনী ও র্যা বের প্রধানদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এমনকি র্যা ব বাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য খুবই লজ্জার।
জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দীন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদ সোহরাব, আখতারুজ্জামান মিয়া, ড্যাবের সভাপতি ডা. আব্দুস সালাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুল ইসলাম, দিনাজপুর পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান মাসুদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোস্তাদির হোসেন তরু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন খান মিলনসহ ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলার বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা।