রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ

0

জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের অভিযোগ

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করতে বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তাবাহিনী গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা গুমের এসব অভিযোগের বিষয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে সরেজমিন জানতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েও সরকারের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।

জাতিসঙ্ঘে মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৫তম অধিবেশন শেষে তৈরি করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা বলা হয়েছে। গত ২০ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গত ৬ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদনটি হালনাগাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। সরাসরি সাক্ষাতে ওয়ার্কিং গ্রুপ গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিনিধিদের সাথে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও সংগৃহীত তথ্যবিনিময় করেছে। পরে গ্রুপ লিখিতভাবে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে ঘনঘন গুমের ঘটনার বিষয়টির সাথে আমরা একমত নই। নিখোঁজ ব্যক্তিদের গুম হিসেবে চালিয়ে দেয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের অভিযোগ সরকারের অর্জন ও ভাবমর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করার হীনউদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে।

ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে গুমের অভিযোগ অবহিত করা হয়েছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ২০১৩ সালের ১২ মার্চ থেকে কয়েক দফায় গ্রুপের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের জন্য অনুরোধও করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি অস্বস্তিকর। মনে রাখা দরকার, যত অভিযোগ পাওয়া গেছে এর সবই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট। এসব সংস্থা ও বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্য ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করার জন্য অব্যাহতভাবে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম করেছে। সূত্রগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সন্ত্রাসবিরোধী আধাসামরিক ইউনিট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এতে সক্রিয়ভাবে জড়িত। সরকার বা রাজনৈতিক বিরোধিতা প্রতিরোধে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে গুমসহ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। বিরোধীদের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গুম করার জন্য কিভাবে নজরদারি চালানো হয় তা জানিয়েছে সূত্রগুলো। নজরদারির কৌশলগুলো মহামারীর প্রেক্ষাপটে বেড়েছে বলে জানা গেছে। করোনা মহামারী মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে।

জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২২ মে থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে গুমের ১৩টি অভিযোগকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের একটি ঘটনা রয়েছে। জরুরি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ৬ জুলাই র‌্যাবের হাতে মাহমুদ হাসান ওরফে মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবির অপহরণের প্রসঙ্গটি সরকারকে জানানো হয়েছে। তবে ১৫ জুলাই র‌্যাব এক বার্তায় জানায়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com