‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবার ভোটডাকাতদের প্রতিহত করা হবে’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা নতুনে নির্বাচন কমিশন করার পরিকল্পনা করছে। যাদের নিয়ে পরিকল্পনা করছে তাতে বলা যায় যে, নতুন বোতলে পুরাতন জিনিস। এ সরকারের আমলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় নির্বাচনেও কেন্দ্র দখল করে বিজয়ী হচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে সংলাপ সংলাপ খেলা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দল গলোকে ডেকে ডেকে সংলাপ করছেন।
কীসের সংলাপ? কেমন করে ইসি গঠন করবে? নির্বাচন কমিশন গঠন করে কী হবে? যে সরকার আছে সে সরকারই তো নির্বাচনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যতদিন সরকারে থাকবে, ততদিন ইসি গঠন করে কোনো লাভ হবে না। সংলাপ করে কোনো লাভ হবে না। পুরনো জিনিস আবার নতুন বোতলে দিয়ে দেখিয়ে কোনো কাজ হবে না।
গতকাল বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
স্থানীয় জেলা সদর মাঠে আয়োজিত আয়োজিত এই সমাবেশে তিনি বলেন, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে সে নির্বাচন কোনদিন অবাধ সুষ্ঠু হতে পারে না। আমাদের অভিজ্ঞতা ১৪ সালের নির্বাচন, ১৮ সালের নির্বাচন। আমাদের অভিজ্ঞতা এখন স্থানীয় পর্যায়ে যে নির্বাচন হচ্ছে ইউপি নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন সব জায়গায় দেখছি সরকার দলীয় লোকজন জোর করে সব ফলাফল তাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এরকম নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই। সমস্যার সমাধান এক জায়গাতেই। তা হচ্ছে নির্বাচনের সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে। যাকে আমরা বলি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর এই সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে তার অধীনে ইসি গঠন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ৭১ সালে পাক সেনাদের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। তাই বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তির বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সরকার বেআইনিভাবে ক্ষমতায় থেকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য আইন দেখাচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। আমরা বারবার বলেছি মানবিক কারণে তাকে বিদেশে যেতে বাঁধা দেবেন না। কিন্ত তারা সে কথা শুনছে না। যদি এই কারণে খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয় তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করে, গুম-হত্যার মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এদিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে যশোর টাউন হল ময়দানে আয়োজিত গণসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এদেশে একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে বলে।
তিনি বলেন, সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নামে ছাগল খুঁজছে। ফলে এই সরকারের অধিনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এমনকি ঘরে বসেও থাকবে না।
সমাবেশে তিনি আরো বলেন, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করা এ দেশের সরকারকে বিদেশে মাফিয়াদের দেশ বলে চেনে। এর থেকে দেশকে বের করতে হবে। এ দেশে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা মুক্তি পেয়ে বিদেশে চলে যায়। অথচ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। এ সরকার চায় খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে। কারণ তারা মনে করেন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গেলে এ সরকার টিকে থাকতে পারবে না। তবে তাকে আটকে রেখেও শেষ রক্ষা হবে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের পতন ঘটাবে।
এছাড়াও এদিন বগুড়ায় বিএনপির সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আপনাদের সময় শেষ। সামান্য একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবেন।’
ক্ষমতাসীনদের দেশ ছেড়ে পালানোরও সুযোগ নেই বলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সম্প্রতি, প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান বিদেশে অবস্থান করতে না পারা এবং র্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, এ সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে সাতজনের নাম ঘোষণা করে তাদের ভিসা বাতিল করেছে। তিনি আরো বলেন, সরকারকে বলব, কয়েকদিন আগেও মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, তাকে কানাডা চালান করা হয়েছিল, কিন্তু ফেরত এসেছে। সরকারকে বলব, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আপনাদের দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, দেশেই যখন থাকতেই হবে, দেশের মানুষের সঙ্গে আপোস করেন, তাদের কাছে ক্ষমা চান, খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চান। বিএনপির সাথে ভালো ব্যবহার করেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠান। সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করেন। নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃসংযোজন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শান্তিতে নেই মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, একদিকে চীনকে সামলায়, অন্যদিকে ভারতকে সামলায়। ভারতকে সামলে চীন থাকে না, চীনকে সামলালে ভারত থাকে না। এই হচ্ছে মিডনাইট সরকারের অবস্থা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর আরো বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য আমরা দয়া চাচ্ছি না। চিকিৎসা তার মৌলিক অধিকার। জাতি জানতে চায় আপনি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবেন কিনা ? যদি না পাঠান তাহলে আমরা আপনার পতনের আন্দোলন শুরু করব। সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, সারাদেশে এখন একটাই কথা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভোটচোর, দুর্নীতিবাজ। এই সরকারের আমলে কারো জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। দেশের জনগণ এই সরকারকে এক মুহুর্তের জন্য আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। অতএব, এই সরকারের পতন ঘটাতে মুক্তিযোদ্ধাদের দল হিসেবে বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনগণ যখন কোনো সরকারকে চায় না তখন কোনো বিদেশী শক্তি তাকে রক্ষা করতে পারে না। যখন বিপদ আসবে পুলিশও তখন পাশে থাকবে না। তিনি বলেন, জনগণই আমাদের শক্তি। সরকারকে বিদায় করতে পাড়া-মহল্লায় আন্দোলন গড়ে তুলুন। সাহস করে রাজপথে নামলে এ সরকার বিদায় নেবেই। তারেক রহমানের নেতৃত্বে শিগগিরই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হবে, মুক্তি পাবেন গণতন্ত্রের মা, মানুষ ফিরে পাবেন ভোটাধিকারসহ সকল অধিকার।