‘আওয়ামী লীগ নিশীরাতের ভোট করে গণতন্ত্রকেও বিচারবর্হিভূতভাবে হত্যা করেছে’

0

আওয়ামী লীগ বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের আত্নস্বীকৃত খুনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, যে সরকারের মন্ত্রীরা বিচারবর্হিতভূত হত্যাকাণ্ডকে স্বীকৃত দেয়, তারা কি গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে? তারা নিশীরাতের ভোট করে গণতন্ত্রকেও বিচারবর্হিভূতভাবে হত্যা করেছে।

গতকাল বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল এবং ‘অগ্নিঝরা মতিহার ও রিজভী আহমেদ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।

রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (রুনেসা) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন রুনেসার সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার।

রিজভী বলেন, আজকে আপনারা দেখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট  র‌্যাব এবং তাদের কয়েকজন ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই যে নিষিদ্ধ ঘোষণা তারপরও কি এদের কোন বোধদয় হয়েছে? তারপরও তারা একই কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল গভীর রাত্রে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জমজম ভূইয়াকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে এখন আবার অস্বীকার করছে। গুম হচ্ছে আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট। এর বাইরে এদের ভাল কোন ঐতিহ্য নেই।

‘১৯৮৪ সালের এই দিনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৮৪ সালের ২২ ডিসেম্বর আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরদিন ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদে বলা হয় যে মারা যাননি বরং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ২২ ডিসেম্বর আমার জীবনে একটি ঐতিহাসিক রক্তঝরা দিন।’

রিজভী বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের মন ভালো নেই। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু নেত্রী নন। তিনি ভীষণ অসুস্থ। তার মুক্তির জন্য আমাদের এই মুহূর্তে রাজপথে নেমে আসা উচিত। যার বক্তব্যে আমরা উজ্জীবিত হতাম, যেই নেত্রী কখনো নির্বাচনে পরাজিত হননি, অন্যায়ের সাথে কখনো আপোস করেননি। সেই নেত্রীকে তিলে তিলে শেষ করে দেশে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি বানানো হচ্ছে, এই সরকারের আসল লক্ষ্য। এজন্যই ছলে-বলে কৌশলে খালেদা জিয়াকে মামলা দিয়ে কারাবন্দী করা হয়েছে। সেই কারণে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য সব আয়োজন করা হয়েছে।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, আজকের জবরদখলকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার কোন নীতি নেই,এথিক্স নেই, রাজনীতি নেই, এমনকি দেশপ্রেমও নেই। তার প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে স্ববিরোধীতা ওয়াদা ভঙ্গ করা। তার কাছে গণতন্ত্র কি? মত প্রকাশের স্বাধীনতা কি? তার কাছে কোন কিছুরই দাম নেই। আর বেগম জিয়া হচ্ছেন আলোর যাত্রী। বেগম জিয়া হচ্ছেন গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য হচ্ছে গণতন্ত্র বিরোধী।

রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনরা মুনাফেক। তারা এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিলেও পরে এরশাদের সঙ্গে লং ড্রাইভে গিয়ে টাকার ভাগ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো। তারাই তো মুনাফেক। অন্যদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে অন্ধকার পথের যাত্রী।

 

এদিন আলোচনা সভায় আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এই স্বৈরাচার সরকারের রূপটা ফ্যাসিবাদী সরকারে হয়ে গেছে। এই যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন, আর স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন এইটার একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। এই মৌলিক পার্থক্য অনুধাবন করে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান করতে না পারেন তাহলে সেখানে আমরা সফলতা অর্জন করতে পারবো না।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের সমালোচনা, মিছিল এগুলো করবো। কিন্তু এগুলো দিয়ে কি সরকারের পরিবর্তন আসবে? এবং পরিবর্তন ছাড়া কি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে যে অবস্থায় আছেন সেখান থেকে কি মুক্তি হবেন? এই প্রশ্নগুলো যখন আমাদের সামনে ভালোভাবে আসবে, আমরা আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারবো। এবং সেই করণীয় কার্যক্রমের আমরা এক সুসংগঠিত নেতৃত্বের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারবো।

 

এছাড়াও আলোচনা সভায় শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে তাদের কর্মের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা এখনও বিচার দেখেন নাই। প্রস্তুত হন আপনাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশের বর্তমান গণতন্ত্রের অবস্থাটা কি? এই দিন শেষ দিন না, আরও দিন আছে। আপনারা জনতার বিচার দেখেন নাই। প্রস্তুত হন আপনাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে এখন পর্যন্ত এই ৫০ বছরে কত দেখলাম। আমরা দেখতে না পেলেও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখতে পাবে।  আপনারা (আওয়ামী লী‌গের নেতা কর্মী) লুটপাট করেছেন সারাজীবন এই ক্ষমতা থাকবে না। পতন একদিন হ‌বেই।

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন,  বিএনপি’র ৬০০ জন নেতাকর্মী গুম-খুন হয়েছে একজন দুজন না। আমি উদ্বিগ্ন এরা (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা) কাঠগড়ায় দাঁড়ালে অপরাধীদের কী সাজা হবে?

উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ছাত্র রাজনীতি করা অবস্থায় এরশাদ সরকারকে উৎখাত করেছেন। আপনারাই তো এখন বিএনপিতে আছেন। কেন আপনারা সরকার পতন করতে পারছেন না? এই জিজ্ঞাসা আমার মনে জাগে।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, বক্তৃতা দেওয়ার জন্য এখন তো আর মতিহারে কেউ ডাকে না। ইউনির্ভার্সি‌টির হলগুলোতে সম্মেলনের জন্য ডাকে না। সেই ভূমিগুলো চোর, ডাকাত দখল করে নিয়েছে। সেই শিক্ষাঙ্গন শিক্ষাঙ্গন নাই। স্বৈরাচার একনায়কতন্ত্র সরকার সেগুলোকে অপবিত্র করে ফেলেছে। সেই সব জায়গায় আড্ডা ছাড়া আর কিছু আছে? তাহলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন আসবে কোথা থেকে।

তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির যেটা করার দরকার ছিল সেটা হচ্ছে না। আর সেই কারণে স্বৈরাচার গেড়ে বসেছে। উত্তর কোরিয়া ও বাংলাদেশ পিঠাপিঠি ভাইবোন হয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কত মা তার সন্তান হারিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সাথে পিঠাপিঠি ভাইবোন হওয়ার জন্য?‌ কিন্তু আজ আমরা তাই দেখ‌তে পা‌চ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে। কোন কারণে যদি আপনি চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার পরিস্থিতি আপনাকে বহন করতে হবে।

বিএনপি’র নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আল্লাহতালা যখন আমা‌দের বাঁচিয়ে রেখেছেন তখন ভয় পাওয়ার,উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। কারণ আমরা ভালো জিনিসটা দেখেই যাব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com