রাষ্ট্রপতির সংলাপ জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা: রিজভী
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে ভোটারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপির আংশিক নতুন কমিটির নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আজ রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডেকেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এই সংলাপ। আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই, রাষ্ট্রপতি তো দেশের অবিভাবক, তিনি অবিভাবক যদি হন, তাহলে সারা জাতি কী চায়, জাতির আকাঙ্ক্ষা কী, তাদের কণ্ঠস্বর থেকে কী শব্দ বের হচ্ছে, এটা তো অবিভাবকের উপলব্ধি করা উচিত। একটা পরিবারের অবিভাবক যখন প্রত্যেকটি সন্তানের অভাব-অভিযোগ শ্রবণ করেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন, তখন রাষ্ট্রের অবিভাবকেরও তো সেটাই করার কথা।
তিনি বলেন, আজেক নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে আইন করার কথা সে আইন করা হয়নি। এছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে নির্দলীয় সরকার থাকার কথা সেটা করা হয়নি। তাহলে রাষ্ট্রপতি কিসের সংলাপ করছেন? তাহলে আবার কি আরেকটি হুদা মার্কা নির্বাচন হবে? আবার কি আরেকটি রকিব মার্কা নির্বাচন হবে? হুদা মার্কা নির্বাচনে আমরা দেখেছি নিশিরাতের নির্বাচন। দিনের বেলায় কোনো নির্বাচন হয় না, রাতের বেলায় অন্ধকারে নির্বাচন হয়। আর রকিব মার্কা নির্বাচনে দেখেছি চতুষ্পদ জন্তু ভোটকেন্দ্রে ঘুরে বেড়ায়, সেখানে ভোটাররা ঘুরে বেড়ায়- এই হলো পরিস্থিতি।
‘তাহলে এই সংলাপের নামে যে ভেলকিবাজি করা হচ্ছে, সংলাপের নামে যে বায়োস্কোপ করা হচ্ছে-জাতির কাছে এজন্য একদিন আওয়ামী লীগ সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। আজকে অবৈধ যে সরকার, সেই সরকারের পক্ষ হয়ে রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করছেন এটি সম্পূর্ণরূপে জনগণের প্রতি এবং দেশের ভোটারদের প্রতি এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করা।’
এই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে খালেদা জিয়াও সংলাপে অংশ নিয়েছেন- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিজভী বলেন, যখন বিএনপি চেয়ারপারসন সংলাপ করেছেন তখন তো নিশিরাতের নির্বাচন দেখিনি, ২০১৪ সালের মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়নি। মাঝখানে এই দৃষ্টান্তগুলো স্থাপিত হয়েছে। এই রাষ্ট্রপতি এই সরকারেরই রাষ্ট্রপতি। এই যে পার্লামেন্টে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা কেউ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। তাদেরই রাষ্ট্রপতি। সুতরাং সরকারের কথার বাইরে এই রাষ্ট্রপতি কিছু করবেন না। সরকারের কথা শোনা মানেই আরেকটি হুদা মার্কা নির্বাচন, আরেকটি রকিব মার্কা নির্বাচন। যে নির্বাচনে ভোটারদের স্বাধীনতা থাকবে না। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দরকার।
এই সংলাপ কার্যকর হবে কি না জানতে চাইলে রিজভী বলেন, এই সরকারেরই রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডেকেছেন। সুতরাং সরকারের কথার বাইরে তিনি এক ধাপও এগুতে পারবেন না। এর আগেও সেরকম কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে, ইনক্লুসিভ রাজনীতি করার দৃষ্টান্ত রাষ্ট্রপতির দিক থেকে আমরা পাইনি। যদি পেতাম তাহলে যেভাবে নির্বাচন, গণতন্ত্র সমাধিস্থ করা হয়েছে, এটা করতে পারতো না, যদি রাষ্ট্রপতি সত্যিকারের অবিভাবকের দায়িত্ব পালন করতেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন ডিসেম্বর মাস, বিজয়ের মাস। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের ভৌগলিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যেটা স্বাধীনতা, সেটা আমরা পাইনি। আজকে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে এবং এরা যখনই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা গণতন্ত্রকে কসাইয়ের মতো হত্যা করেছে। নাগরিকের সব স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে তারা।
তিনি বলেন, বিজয় দিবসের যে বার্তা এবং স্বাধীনতার যে মূল চেতনা সেটা হলো গণতন্ত্র। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা আওয়ামী লীগকে পেলাম ইয়াহিয়া খানের মতো, টিক্কা খানের মতো। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানের ভূমিকা পালন করছে। বিরোধীদলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়েছে এবং গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি রাখা হয়েছে। তার যে মৌলিক অধিকার সুচিকিৎসা, উন্নত চিকিৎসা এবং বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা, সে ব্যবস্থা না করে একটা নির্দয় অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এদিন জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।