আ.লীগ সরকার জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ভোলানোর অপচেষ্টা করছে: বিএনপি
সরকার জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বাংলাদেশে যিনি প্রথম বলেছিলেন, উই রিভোল্ট, আমরা বিদ্রোহ করলাম। সেই মানুষটার নাম মেজর জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে তিনি তার ইউনিটে ফিরে যান, তার কামন্ডার ছিলেন একজন পাঞ্জাবি অফিসার, তাকে বন্দি করেন…। জিয়াউর রহমানের কন্ঠেই প্রথম আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছি রেডিওতে।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘কেউ এখন আইন করে কিংবা কোনো আদালত রায় দিয়ে যদি আমাকে বলে যে, তুমি নিজের কানে যা শুনেছো সেটা বিশ্বাস করো না। আমি কী করে তা মানবো? আমি তো কারও কাছ থেকে শোনা কথা বলছি না। আমি নিজের কানে শোনা কথা বিশ্বাস করবো না? কিন্তু আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমি বলবো অপচেষ্টা হচ্ছে। দেশকে এই ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত করতে হবে। যার যা প্রাপ্য সেটা তাকে দিতে হবে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম সেটা একদিনের প্রস্তুতি না। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অনেক সংগ্রাম-আন্দোলনে মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে পৌঁছেছি, স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি। এই সময়গুলোতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য সে সময়ে যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেও শ্রদ্ধা জানাতে হবে, তারাও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য।’
‘কারণ সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ক্ষেত্র প্রস্তুত না করতো তাহলে তো যুদ্ধে করে আমরা জনগণের সমর্থন পেয়ে বিজয়ী হতে পারতাম না। সেই সময়ে সারা দুনিয়ার যারাই আমাদের সহযোগিতা করেছেন, সমর্থন জানিয়েছেন তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। সেই সময়ে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন, এমনকি যারা কিছু করতে পারেন নাই- আমাদের জন্য দোয়া করেছেন তাদের কাছেও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। কিন্তু কাউকে কোনো মর্যাদা না দিয়ে, কারো প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ না জানিয়ে শুধুই যদি আমরা কেউ নিজেরা এই গৌরবকে দখল করতে চাই, এটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা অন্যায়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আজ মহান স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি, স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের প্রতি, স্বাধীন বাংলাদেশের যে প্রথম সরকার সেই সরকারের যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীসহ সব সেক্টার কামান্ডার, ফোর্সেস কমান্ডার, সাব সেক্টার কমান্ডার, যারা সৈনিক ছিলেন, যারা সহযোগী ছিলেন, যারা সাহায্য করেছেন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, গভীর শ্রদ্ধা সেইসব মা-বোনদের প্রতি যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবনের সর্বোচ্চ সম্পদ হারিয়েছেন, যে সন্তানরা তাদের মা-বাবা-ভাই-বোনকে হারিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’
‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়াসহ তার দুই সন্তানকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কারাগারের মাসের পর মাস কাটাতে হয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা, তাদের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য আমাদের, যিনি ৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর কারাগারে দুই সন্তানসহ বন্দিজীবন কাটিয়েছেন, আজকে আবার এই সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগে তাকে অসুস্থ অবস্থায়ও কারারুদ্ধ হয়ে থাকতে হচ্ছে’, যোগ করেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সাদা কাগজে শিশু-কিশোররা আমার মা, আমার দেশ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, ধানের শীষ, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মিনার, খাল-খনন, সবুজ গ্রাম প্রভৃতি চিত্র নানা রঙ দিয়ে আঁকে।
শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তোমরা সত্য জানার চেষ্টা করো। মনে রাখবে জ্ঞান তাই যা সত্য। মিথ্যা জানা জ্ঞান নয়। যারা মিথ্যা জানাতে চায় তারা আমাদেরকে অজ্ঞানতার অভিশাপে আবদ্ধ করতে চায়। কাজেই সত্য জানার আবেগ ও উৎসাহ আরও জাগ্রত হোক।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক সেলিমা রহমান। কমিটির সদস্য সচিব কবি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, মেজবাহ আহমেদ, আবদুল বারী ড্যানি, আমিনুল ইসলাম, আবেদ রাজা, খান রবিউল ইসলাম রবি, ফরিদা ইয়াসমীন, মহসিন মন্টু, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, রীতা আলী প্রমুখ।