এত লুটপাটের পরও মুস্তফা কামাল বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী!

0

দেশে উন্নয়নের কতগুলো বেলুন ফুলিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন প্রতিদিনই তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে একটি করে বেলুন উড়াচ্ছেন আর কথিত বায়ুবীয় উন্নয়নের জিগির তুলছেন। তার সঙ্গে সুর তুলছেন দলের নেতা ও মন্ত্রীপরিষদের চেলারা। তাদের মুখে এখন শুধু একটাই শব্দ-উন্নয়নের মহাসড়ক, উন্নয়নের রোল মডেল।

সত্যিকার অর্থে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা? অর্থনীতি নামের দেশের মেরুদণ্ডের হাড়গুলো কতটুকু শক্ত আছে? কি বলছেন অর্থনীতিবিদরা?

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস রফতানি খাত। আর এ খাতেই এখন প্রবৃদ্ধি ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম সাড়ে ১২ শতাংশ আর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

মজার খবর হলো- বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে ভিয়েতনাম। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ব্যয় কমাতেও বড় সাফল্য দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। সার্বিক পরিস্থিতিকে খুবই খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। তিনি বলেন, গেলো অক্টোবর মাসের ১ থেকে ২৮ অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ২২ শতাংশ। অথচ গত বছরের এই ২৮ দিনে ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

তারপর, আয় নিয়ে আরেক বড় দুশ্চিন্তার নাম রাজস্ব খাত। বিশাল আকারের বাজেট দিয়ে এখন আয় নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। সামগ্রিকভাবে চলতি প্রথম চার মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি প্রায় ২০ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এই চার মাসের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের সামান্য বেশি, অথচ এবার গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এমনকি রাজস্ব আয়ের প্রধান তিন খাতেই আদায় কমেছে। তিন খাত হলো আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক-কর, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট এবং আয়কর।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে আমদানি ব্যয়েও প্রবৃদ্ধি হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী টানা কয়েক মাস ধরে রফতানি বাণিজ্যেও ধস নেমেছে। বেড়েই চলেছে বাণিজ্য ঘাটতি। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। কমে গেছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি। শুধু তাই নয়, কমে গেছে রাজস্ব আদায়ও। মূল্যস্ফীতি এখন উর্ধ্বমুখী। ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে ভয়ঙ্করভাবে।

আর শেয়াবাজারের অবস্থাতো এখন আরও ভয়াবহ। পতন হতে হতে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু দিন আগে কয়েক লাখ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে দেশের শেয়ারবাজার থেকে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসলেও এনিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

বর্তমান এই পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে তুলনা করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি মোটেও ভালো নয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। বিনিয়োগ হচ্ছে না। কাঁচামালের আমদানি কমে গেছে। বেকারত্ব বাড়ছে। প্রবাসী আয় বাড়লেও প্রবাসীর সংখ্যা কমছে। ভবিষ্যতে প্রবাসী আয় আসার প্রবণতাও কমে যাবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির যে চাঙাভাব আশা করছি, তা আর থাকবে না। আমরাও গর্তের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।’

তবে অর্থনীতির সূচকগুলো যে এতো খারাপ অবস্থায় পড়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হচ্ছে না। স্বীকার করলে এই সমস্যা সমাধানের বিষয়টি আলোচনায় আসতো। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এই পরিস্থিতিকে অস্বীকার করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশ মন্দায় পড়েছে এটা স্বীকার করে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মন্দার কবল থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। তা না হলে দেশের অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়বে। তারা মনে করেন, মন্দা স্বীকার করে সেভাবে পলিসি নিলে এখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। আর স্বীকার না করলে সেভাবে পলিসি নেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে সংকট আরও বাড়বে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলছেন, মন্দার ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি। এ কারণে আমাদের আগে থেকে প্রস্তুতিও নিতে হবে। তার মতে, নিম্নমুখী বিভিন্ন সূচকগুলোর মধ্যে রফতানি যদি ঘুরে দাঁড়ায় তাহলে বিপদ কিছুটা কম হতে পারে। তবে সেটা খুবই অনিশ্চিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থা এখন খুবই খারাপ। ঋণ নিতে নিতে সরকার ব্যাংকগুলোকে একেবারে ফোকলা করে ফেলেছে। কথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দিয়ে এসব টাকা সরকারের লোকজন বিদেশে পাচার করছে। দেশ চালানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ টাকা এখন সরকারের হাতে নেই। তাই টাকার যোগান দিতে সরকার বার বার তেল-গ্যাস ও বিদ্যুদের দাম বাড়াচ্ছে। বলা যায়-সরকার এখন দেশ চালাতে জনগণের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে।

দেশের শেয়ারবাজারে প্রতিদিন দরপতন হচ্ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু, অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল লুটপাটকে ধামাচাপাতে দিতে এখন বলছেন-শেয়ারবাজারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, শেয়ারবাজার লুটের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর সরাসরি হাত রয়েছে। এছাড়া গত কুরবানির ঈদে কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে যে তুলকালাম সৃষ্টি হয়েছিল সেখানেও জড়িত ছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। লুটপাটের পর সরকারের শূন্য কোষাগার পূরণ করতেই অর্থমন্ত্রী একটার পর একটা সেক্টর থেকে অর্থ লুটে নিচ্ছেন্।
কিন্ত, সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হলো-এত চুরি-ডাকাতি আর লুটপাটের পরও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল নাকি বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বরা হয়েছে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজনেস পত্রিকা দ্য ব্যাংকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে। তবে, অর্থনীতিবিদসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, দুইট কারণে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এই ব্যাংকার পত্রিকা তাকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত করতে পার্।

প্রথমত: আসলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে কিছু জানে না দ্যা ব্যাংকার পত্রিকা। আর অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল যে কিভাবে লুটপাট করে অর্থনীতির যোগান দিচ্ছেন সেটাও জানে না তারা। অজানা থেকেই তারা মুস্তফা কামালকে সেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে। শুধু সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য-বিবৃতি শুনেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত: হয়তো তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি জানে। কিন্তু, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মুস্তফা কামালকে তারা বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রীর খেতাব দিয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com