প্রযুক্তিতে অচিরেই আমেরিকাকে টেক্কা দেবে চীন

0

গত অক্টোবরে সিআইএ-র (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) পরিচালক বিল বার্নস ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি নতুন দুটি প্রধান ‘মিশন সেন্টার’ খুলছে। একটি সেন্টারের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে চীন, অপরটি কাজ করবে প্রযুক্তি নিয়ে।

সিআইএ পরিচালকের এই ঘোষণাই প্রমাণ করে, আমেরিকার জন্য চলতি শতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক হুমকির নাম চীন। আর চীন ও আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সবচেয়ে হবে বেশি প্রযুক্তি খাতে। আমেরিকানদের মনে প্রশ্ন—চীন কি প্রযুক্তির লড়াইয়ে জিতে যাবে?

হার্ভার্ডের বেলফার সেন্টারের ‘গ্রেট টেকনোলজিক্যাল রাইভালরি’ শীর্ষক এক নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—হ্যাঁ, এ যুদ্ধে চীনই জিতবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিতে চীন অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। ২১ শতাব্দীর সমস্ত অতিপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তিতে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, ফাইভজি ওয়্যারলেস, কোয়ান্টাম তথ্যবিজ্ঞান, বায়োটেকনোলজি ও সবুজ জ্বালানি—অচিরেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে চীন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশটি ইতিমধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেই।

গত বছর বিশ্বের অর্ধেক মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার উৎপাদন করেছে চীন। আমেরিকা উৎপাদন করেছে মাত্র ৭ শতাংশ। আমেরিকা একটি সোলার প্যানেল বানালে চীন বানায় ৭০টি। আমেরিকার তুলনায় চীনে বৈদ্যুতিক বৈদ্যুতিক বাহনের বিক্রি চারগুণ বেশি, ফাইভজি বেজ স্টেশন নয়গুণ বেশি। আর আমেরিকার তুলনায় চীনের নেটওয়ার্ক স্পিড ৫গুণ বেশি।

আগামী দিনে অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে যে প্রযুক্তি, সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে চীন ইতিমধ্যেই আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে গেছে। ২০২১ সালের এক মার্কিন প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ আমেরিকাকে পেছনে ফেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় শীর্ষস্থান দখল করে নেবে চীন। হার্ভার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআইয়ের ব্যবহারিক প্রয়োগে—ফেসিয়াল ও ভয়েস রিকগনিশন—চীন ইতিমধ্যেই আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে গত অর্ধশতাব্দী ধরে এগিয়ে রয়েছে আমেরিকা। তবে চীন এই শিল্পে অতি শীঘ্রই দুটো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমেরিকাকে ধরে ফেলতে পারে—সেমিকন্ডাক্টর তৈরি ও চিপ ডিজাইন। ইতিমধ্যে আমেরিকার চেয়ে বেশি সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন করছে চীন। বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের ১৫ শতাংশ হয় চীনে, ১৯৯০ সালে যা ছিল ১ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে আমেরিকা বিশ্বের মোট সেমিকন্ডাক্টরের ১২ শতাংশ উৎপাদন করে, ১৯৯০ সালে যা ছিল ৩৭ শতাংশ।

ফাইভজিতেও আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। আমেরিকা যেখানে ফাইভজির জন্য দেশজুড়ে ১ লাখ বেজ স্টেশন স্থাপন করেছে, সেখানে চীন স্থাপন করেছে সাড়ে ৯ লাখ স্টেশন। চীনে বর্তমানে ১৫ কোটি মানুষ ৫জি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, যার গড় গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ মেগাবিট। অন্যদিকে আমেরিকায় মাত্র ৬ কোটি মানুষ ৫জি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সেগুলোর গতিও চীনের তুলনায় অনেক কম—প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৬০ মেগাবিট।

চাইনিজ কমিনিস্ট পার্টি কোনো রাখঢাক না করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী দশকগুলোতে প্রযুক্তি খাতে চীন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে চায়। ‘মেড ইন চায়না’ কর্মসূচির আওতায় ৫জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বৈদ্যুতিক বাহনসহ উদীয়মান ১০ প্রযুক্তি খাতে নিজস্ব পণ্য দিয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য স্থির করেছে চীন। রোবটিকসেও শীর্ষস্থান দখলের লক্ষ্য স্থির করেছে চীন।

মোদ্দা কথা, অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমেরিকা এখনও বিশ্বকে নেতৃত্ব দিলেও চীন এখন তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতে শঙ্কিত হয়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে আমেরিকা। আগামী পাঁচ বছরে আমেরিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ২৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

তবে আমেরিকা যদি এখনই প্রযুক্তি খাতে গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ করতে শুরু না করে, তবে অচিরেই এই খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করবে চীন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com