সড়কে প্রাণহানি এই নৈরাজ্য কি থামবে না?
গাড়ির বেপরোয়া গতি একের পর এক জীবন কেড়ে নিচ্ছে; মুহূর্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে একটি পরিবারের স্বপ্ন। কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত; এরই মধ্যে সোমবার রাতে রাজধানীর রামপুরায় অনাবিল পরিবহণের একটি বাস মাঈনুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীর জীবন কেড়ে নিল। নিহত মাঈনুদ্দিন স্থানীয় একরামুন্নেছা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটানো মাঈনুদ্দিন সবসময় স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে বাবা মায়ের দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। বেপরোয়া গতির বাস তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না। জানা গেছে, তিনি যখন সড়ক পার হচ্ছিলেন তখন দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে চলছিল। দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় মাঈনুদ্দিনের পরিবারের স্বপ্ন। এভাবে অতীতেও বহু মানুষের প্রাণ গেছে। কিন্তু সড়কের এ নৈরাজ্য বন্ধ হয়নি। দুর্ঘটনা রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দুর্ঘটনার ব্যাপকতা কমছে না।
দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা। এটি যেন নিয়মেই পরিণত হয়েছে। বস্তুত প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন নির্মম পরিণতি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে হলে আইন প্রয়োগে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। বস্তুত চালকের অদক্ষতা আর আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
আমাদের প্রশ্ন, একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে আর কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাত হাজির করবে-এ প্রবণতা কবে বন্ধ হবে? ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলনে নেমেছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনা তো কমেইনি, বরং বলা যায় বেড়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০১৯ সালে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সুপারিশগুলোর বেশিরভাগই এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। লক্ষ করা যায়, একেকটি দুর্ঘটনার পর পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়, প্রতিবাদ হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বলা যায়, সড়কে মৃত্যু এখন এক অতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমরা এমন মৃত্যু আর দেখতে চাই না। সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ সড়ক, বাঁচাতে হবে মানুষের প্রাণ।