যুবলীগ নেতার নির্দেশে কৃষিবিদের ধান গবেষণা ক্ষেত নষ্ট করার অভিযোগ
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক প্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ। দীর্ঘদিন যাবৎ করছেন ধান গবেষণার কাজ। তবে গত সোমবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার নির্দেশে ট্রলি চালিয়ে বিনষ্ট করা হয় তার গবেষণার ক্ষেত। এতে ক্ষতি হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, শুধু ধানক্ষেত নষ্টই নয় প্রতিবাদ করায় কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরও করেন ওই যুবলীগ নেতা। এই ঘটনায় সোমবার রাতেই তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে তানোর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ।
জানা গেছে, কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ গোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। একজন আদর্শ কৃষক হিসেবেও তার সুপরিচিতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ধান গবেষণায় কাজ করছেন তিনি। তার উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই’শ। এছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় তিনশ জাতের ধানের বীজ সংরক্ষণে রেখেছেন এই গবেষক। গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয়সহ বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
থানায় এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব সরকারের নির্দেশেই এ হামলা হয়েছে। দলবল নিয়ে হামলা চালিয়েছেন গোল্লাপাড়া বাজারের কসমেটিকস ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ কর্মী অঞ্জন মালাকার (৪৫)।
অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, নূর মোহাম্মদ গত ১০ বছর ধরে এই গবেষণা চালাচ্ছিলেন। তার গবেষণা ক্ষেতে ৬২ প্রজাতির ধান কেটে রাখা ছিল। বাকিটা কর্তনহীন ছিল। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অঞ্জন মালাকার শ্রমিকদের নিয়ে তার গবেষণা ক্ষেতের ওপর দিয়ে ট্রলি নিয়ে যান। এতে নিষেধ করায় তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান অঞ্জন মালাকার। ওই সময় আব্দুল ওহাব সরকার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে আব্দুল ওহাব সরকার ও অঞ্জন মালাকারের নির্দেশে শ্রমিকরা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করেন। পরে গবেষণা ক্ষেত মাড়িয়ে ধানবোঝাই ট্রলি নিয়ে যান। বাধা দেওয়ায় তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে নূর মোহাম্মদ বলেন, যুবলীগ নেতা ওহাব সরকার চাইলেই পাশের প্লট দিয়ে ট্রলি নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। ইচ্ছা করেই গবেষণা খেতের ওপর দিয়ে ট্রলি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে তার ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা। জড়িতদের শাস্তি চান তিনি।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেন পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব সরকার।
তিনি বলেন, একথা সত্য নয়। আমার শ্রমিকেরা কাটা ধানগুলো সরিয়ে রেখে ট্রলি নিয়ে গেছে। উনার গায়ে পর্যন্ত হাত দেওয়া হয়নি, তুলে নিয়ে গিয়ে মারা তো দূরের কথা। তিনি পুরোপুরি মিথ্যাচার করছেন।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করলেও তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, তেমন আহামরি ঘটনা ঘটেনি। তারপর যেহেতু একজন অভিযোগ করেছেন, সেহেতু অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।