কপ২৬: যা বলছে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো

0

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে চললো। বিশ্বনেতারা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৪০টির বেশি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধের এবং আরও ১০০জন নেতা ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে তারা মিথেন নির্গমন বন্ধে একসঙ্গে কাজ করবে। এমন অগ্রগতি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

চীন

চীনের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে এক ধরনের নীরবতা ছিল। বিষয়টি এমন নয় যে, চীনের সাধারণ মানুষ জলবায়ু সম্মেলন চলমান থাকা সম্পর্কে জানেন না। কিন্তু কাভারেজ নিশ্চিতভাবে কমিয়ে রাখা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যোগ না দেওয়া হয়ত একটি কারণ হতে পারে। যদি সম্মেলনের খবর প্রকাশ করা হয় তাহলে অন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর নেতারা থাকলেও চীনের প্রতিনিধিত্ব না থাকার বিষয়টি নজরে আনা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কপ২৬ সম্মেলনে জলবায়ু ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রদর্শন করতে দৃঢ় সংকল্প ছিলেন। কিন্তু এমএসএনবিসি’র কলামিস্ট হায়েস ব্রাউন উল্লেখ করেছেন, সবার আগে বাইডেনের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত ছিল।

রক্ষণশীল ঘরানা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল উল্লেখ করেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন চেষ্টা করেছেন বিশ্ব বিবেকের কাছে রাশিয়া ও চীনকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের চেষ্টায় সাড়া দিচ্ছে না মস্কো ও বেইজিং।

ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর জো মানচিন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু তহবিলের ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়া

এই সপ্তাহে একটি ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম ছিল, আমাদের ‘ভঙ্গুর’ পৃথিবীকে রক্ষায় রানির আবেদন। আর রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম ছিল, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে কি সত্যিকার অর্থে আমাদের ভয় পাওয়া উচিত?

প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, আমাদের ভয় পাওয়া উচিত না। দাবি করা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও রয়েছে (বিশেষ করে রাশিয়ার জন্য)। যেমন, উষ্ণতার বিল কমবে, নৌযান রুট আরও সহজ হবে। জলবায়ু জরুরি অবস্থার কোনও অর্থ হয় না এখানে।

শুধু তাই নয়, ক্রেমলিন অস্বীকার করছে জলবায়ু পরিবর্তনে কোনও সমস্যা হচ্ছে বলে। উল্লেখ করেছে, বিশ্বের গড় উষ্ণতার তুলনায় রাশিয়ার আড়াই গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে।

যদিও গ্লাসগোতে একটি বড় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্বশরীরে উপস্থিত হননি। ভিডিও স্ক্রিনে হাজির হয়েছেন শুধু। অবশ্য রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার। বন উজাড় বন্ধে গ্লাসগো ঘোষণাতেও স্বাক্ষর করেছে তারা।

ভারত

কপ সম্মেলনে নীতিনির্ধারকদের আলোচনায় ভারত বড় বিষয় হলেও ভারতের আমজনতার কাছে জলবায়ু সম্মেলন তেমন কোনও ইস্যু ছিল না। কিন্তু সোমবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরো’র প্রতিশ্রুতি দিলে গ্লাসগো শেষ পর্যন্ত তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।

ভারতে প্রাইম টাইমে সম্প্রচার হয় মোদির ভাষণ। অনেক মানুষ অন্যান্য দেশের তুলনায় দুই দশক পর কার্বন নিরপেক্ষ হতে ভারতের ঘোষণায় হতাশ। তবে অনেকেই এটিকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন।

অনেকে আবার মোদির এই প্রতিশ্রুতিকে পশ্চিমাদের কাছে নত না হওয়ার হিসেবে দেখছেন। ফার্স্ট পোস্ট সংবাদমাধ্যমের খবরে মোদির এই ঘোষণাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত বলে উর্লেখ করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া

কপ২৬-এ কয়লা ব্যবহার বন্ধ করা ছাড়াই ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা কীভাবে অর্জন করা যাবে তা বিশ্বের কাছে ব্যাখ্যার দায়িত্ব ছিল অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের। কিন্তু এই লক্ষ্য ঢাকা পড়ে গেছে সাবমেরিন ইস্যুতে এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিরোধের কারণে।

গত সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু বিতর্ক নিয়ে আলোচনা ও কপ২৬-এ অস্ট্রেলিয়ার অর্জন নিয়ে কথা বলার বদলে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমে মরিসনের চরিত্র এবং ফ্রান্স ইস্যুতে তার অবস্থান দেশে প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে আলোচনাই বেশি।

২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নির্গমন ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিতে অস্ট্রেলিয়ার সম্মত হওয়ার ঘটনা শিরোনাম হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজ প্রধানমন্ত্রীর গ্লাসগো সফরকে ‘ভয়াবহ বিশৃঙ্খল সপ্তাহ’ বলে উল্লেখ করেছে।

ব্রাজিল

জলবায়ু পরিবর্তনে আন্তর্জাতিক ব্রাজিলের অনেক অবদান রাখার থাকলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো যা বলছেন এবং করছেন তাতে পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মনে হয়। তিনি এমনকি কপ২৬-এ উপস্থিত হননি।

মানুষকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে সহযোগিতা করায় নিয়োজিত একটি সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সিলভিয়া চেরভেলেনি বলেন, মানুষ অংশগ্রহণ করতে চায় এবং তাদের অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। কিন্তু মহামারিতে দারিদ্র বেড়েছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ব্রাজিলজুড়ে। মানুষ এখন তার দৈনন্দিন সংকট নিয়ে বেশি চিন্তিত।

ইরান

বিশ্বের শীর্ষ দশটি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশের একটি ইরান এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার বড় ধরনের প্রভাব টের পাচ্ছে তেহরান। ইরানি প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেছেন, যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় তাহলে নির্গমন কমাতে কোনও বাধা থাকবে না।

জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকে মনে করেন নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে ইরানের কাছ থেকে প্রতিশ্রিুতি আশা করা অন্যায়। অন্যরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তন সরকারের অদক্ষতাকে আড়ালের সুযোগ দিয়েছে।

নাইজেরিয়া

আফ্রিকার বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ ২০৬০ সালের মধ্যে নির্গমন শূন্যে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বড় মিডিয়া হাউস গ্লাসগোতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রথম পাতায় এই খবর স্থান পায়নি।

সৌদি আরব

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশটি কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে এতদিন পশ্চিমাদের চাপ অগ্রাহ্য করে আসছিল। কিন্তু এই মাসে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যতে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com