বন রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আহ্বান টিআইবির

0

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনে ২ নভেম্বর বন ও ভূমি ব্যবহারে বিশ্ব নেতাদের সম্মিলিত ঘোষণার সঙ্গে বাংলাদেশ একাত্মতা প্রকাশ না করায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

অবিলম্বে আন্তর্জাতিক এই ঘোষণার সাথে একাত্মতা প্রকাশের পাশাপাশি এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে এবং বন রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (০৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানায় টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে বিশ্বের ১২৪টি দেশের ঘোষণার সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতা প্রকাশ না করা চূড়ান্ত হতাশাজনক। বিশেষ করে, ব্রাজিলসহ আফ্রিকার বহুদেশ এই ঘোষণায় যুক্ত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাড়া না দেওয়া অবিশ্বাস্য! অথচ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসেবে, বাংলাদেশে বার্ষিক বৈশ্বিক গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ বন উজাড় হয়, যা ২ দশমিক ৬ শতাংশ। শুধু গত সতেরো বছরেই দেশের প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয়েছে। আর বন বিভাগের হিসেবে, সারাদেশে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৩ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। এমনকি সরকারি-বেসরকারি নানা অপরিনামদর্শী কর্মকাণ্ডে প্রাকৃতিক সুরক্ষাবলয় হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনও এখন হুমকির মুখে। এমন কঠিন বাস্তবতায় বৈশ্বিক এ ঘোষণায় বাংলাদেশের অবিলম্বে সম্পৃক্ত হওয়া অবশ্য কর্তব্য।

বন ধ্বংস বন্ধে বিশ্ব নেতাদের এই ঘোষণার লক্ষ্য অর্জনে ৯ বছর খুব স্বল্পসময় মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সালের জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত অনুরূপ একটি চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এবারের ঘোষণা ব্যর্থ হলে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরও কঠিন হবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশের উচিত, অবিলম্বে এই ঘোষণার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা এবং এর বাস্তবায়নে অধিক দূষণকারী রাষ্ট্রসমূহের কার্যকর ভূমিকা আদায়ে সচেষ্ট হওয়া।

তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশ কার্বন নির্গমণ হ্রাসে কয়লার ব্যবহার বন্ধসহ ২০৩০ সালের মধ্যে বন রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে পর্যাপ্ত ও সময়াবদ্ধ অর্থায়ন নিশ্চিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়াস জোরদার করবে।

বাংলাদেশের বনভূমিগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়লে বননির্ভর ১৯ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকাসহ পুরো দেশই হুমকির মুখে পড়বে এমন হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, পরিবেশবাদীদের ক্রমাগত উদ্বেগ এবং স্থানীয় জনগণের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকার পরিবেশগতভাবে বিপন্ন এলাকায়- যেমন সুন্দরবনের কাছে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, কক্সবাজারের ঝিলংজা বনভূমির ৭০০ একর বন্দোবস্ত নিয়ে প্রশাসন একাডেমি স্থাপন এবং লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের মতো নানা প্রকল্প নিয়েছে। অথচ এই প্রকল্পগুলোর কারণে পরিবেশের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বন ধ্বংস আরও বৃদ্ধি পাবে। বন রক্ষায় হুমকি এ ধরনের প্রকল্পগুলো অবিলম্বে বাতিলে আমরা সরকারের শুভবুদ্ধি প্রত্যাশা করছি এবং ২০২১ সালের পর আর কোনো কয়লাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন না দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

টিআইবি আশা করে, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় ও দখল বন্ধ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জনে বন খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ তৎপর হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com