ইউপি নির্বাচন: সংঘাতে আ’লীগ নেতাকর্মীরা

0

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে বগুড়া জেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলে জর্জরিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি ভোটারদের সমর্থন কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলের ক্লিন ইমেজের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল মোতাবেক আগামী ২৮ নভেম্বর বগুড়া সদরের ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় ফাঁপোড় ও এরুলিয়া ইউপি নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।

ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগ প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণার পর মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এছাড়া বিএনপির স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বগুড়া সদর
নুনগোলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বদরুল আলমের কর্মী আব্দুর রাজ্জাক (৩৫) নামে আরো একজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঘোড়াধাপহাট বাজারের কাছে ওই ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত আব্দুর রাজ্জাককে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি রজাকপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে।

এর আগে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন সহসভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিনের নৌকা প্রতীকের পক্ষে মিছিল নিয়ে রজাকপুর গ্রামে গেলে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজার রহমানসহ ৫ জনের ওপর হামলা চালায়। আহত মাহফুজার রহমান বর্তমানে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে নুনগোলা ইউনিয়নের অনেক গ্রামেই দুই প্রার্থীর সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন।

আওয়ামী লীগ বগুড়া সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ জানিয়েছেন, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের কেউ যদি নির্বাচন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিবগঞ্জ
দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বগুড়ার শিবগঞ্জে নির্বাচনী মাঠ সহিংস হয়ে উঠছে। বুধবার রাতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ১২টি নির্বাচনী অফিস ও ৬টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে প্রতিপক্ষ। এছাড়া সহিংসতায় ২ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অপরটিও অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই প্রার্থী হলেন বিহার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগনেতা মতিউর রহমান মতিন ও মাঝিহট্ট ইউনিয়নের একইদলের স্বতন্ত্র প্রার্থী এসকান্দার আলী সাহানা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত আটটায় বিহার ইউনিয়নের বিহার হাটে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা মতিউর রহমানের মোটরসাইকেল মার্কার নির্বাচনী অফিসে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে চেয়ার টেবিল ও ৬টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলার ঘটনায় দুই কর্মী আহত হন।

বিহার ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান অভিযোগ করে বলেছেন, ‘বিনা উস্কানিতে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও আমার দুই কর্মীকে ছুরিকাহত করেছে।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু ২০-২৫ জন বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিহার বন্দরে প্রবেশ করে আমার ও নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। এতে উপস্থিত জনতা প্রতিবাদ করতে গেলে বহিরাগতরা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে। তখন স্থানীয় জনতা প্রতিরোধ করলে তারা নিজেরাই নিজেদের অফিস ভেঙে আমাদের দোষ দিচ্ছে।’

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে আহত হারুনের বাবা বাবু মোল্লা শিবগঞ্জ থানায় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।

এদিকে বুধবার একই সময়ে মাঝিহট্ট ইউনিয়নের এসকান্দার আলী সাহানা নামে এক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ১১টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়। এসকান্দার আলী অটোরিকশা মার্কা নিয়ে এ ইউনিয়নে নির্বাচন করছেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন এসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে চলে যায়। ভাঙচুর করা অফিসগুলো ভালুঞ্জা, শনভালকি, ভারাহার, মাঝিহট্ট, গোবিন্দপুর, মোল্লা পাড়া ও চকপাড়াসহ ১১টি স্থানে রয়েছে।

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এসকান্দার আলী সাহানা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল গফুর ও অপর স্বতন্ত্রপ্রার্থী আকবর আলী মিলে আমার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে বলেন, পুলিশ সহিংসতা প্রতিরোধে তৎপর রয়েছে। বিহারের ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিদুল ইসলাম ও মতিউর রহমান মতিনকে থানায় ডেকে সমঝোতা করে দেওয়া হয়।

শেরপুর
শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরিমল দত্তকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু।

বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় নামেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু তার কর্মীদের নিয়ে আনারস প্রতীকের পক্ষে খানপুর পূর্বপাড়া হাছেন আলীর বসতবাড়ির উঠানে প্রচারণা করছিলেন। এ সময় গিয়াস উদ্দিন ও ফয়সালের নেতৃত্বে নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়ে প্রচারণা সভা ভণ্ডুল করে দেয়। সেইসাথে তাদের বেধড়ক মারপিট করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই অতর্কিতভাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়ে তার প্রচারণা সভা ভণ্ডুল করে দিয়েছে। তার কর্মী-সমর্থকদের বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণার শুরুতেই এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা উদ্বিগ্ন।

অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী পরিমল দত্ত বলেন, এই ধরনের কোনো ঘটনায় তার কর্মী-সমর্থকরা জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। এটি সাজানো নাটক।

শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com