বিক্ষোভ হামলা আর ট্রাম্পের অভিশংসনের বছর

0

ঘটনাবহুল ২০১৯ সাল। এই এক বছরে দুনিয়া জুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে—যাতে মানুষের হৃদয় দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়েছে, আবার খুশিতে আন্দোলিত হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামের স্লোগান দুনিয়ার চারকোণে শোনা গেছে। বিভেদ, সংঘাত, রক্তপাত যেমন বেড়েছে তেমনি বহুত্ববাদকে ধারণ করে বসবাসযোগ্য শান্তির পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ও দেখা গেছে।

২০১৯ সাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে দেশে-দেশে বিক্ষোভ আর আন্দোলনের জন্য। হংকং থেকে বলিভিয়া, ফ্রান্স থেকে লেবানন পর্যন্ত দেখা গেছে আন্দোলনের উত্তাপ। গত জুন থেকে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে হংকংয়ে। বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে সরকারি একটি বিলের বিরোধিতা করে গত জুনে বিক্ষোভের ডাক দেয় চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকা হংকংয়ের বাসিন্দারা। বিতর্কিত বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হলেও রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে এখনো বিক্ষোভ চলছে। হংকংবাসীদের বিক্ষোভ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামতে উত্সাহিত করছে।

২০১৯ সালে বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদীদের হামলা বিশ্ববিবেককে ধাক্কা দিয়েছে। গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুটি মসজিদে হামলা চালায় এক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী। তার গুলিতে ৫০ জন নিহত হন। এই হামলার পর উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব দেখান প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন। তার বিভিন্ন উদ্যোগে বিশ্ব আশান্বিত হয়েছে। এর এক মাস পর শ্রীলঙ্কায় কয়েকটি গির্জা ও বড়ো হোটেলে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। দিনটি ছিল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড়ো উৎসব ইস্টার সানডে। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জনের বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। গবেষকদের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। মোট ৪১টি ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে মোট ২১১ জন।

এ বছরই যুদ্ধে জড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের। গত মে থেকে জুন মাসে হরমুজ প্রণালির কাছে বেশ কয়েকটি তেল ট্যাংকারে হামলার ঘটনা ঘটে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলো ইরানকে দায়ী করে। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোন ভূপাতিত করলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার অনুমতি দেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি মত বদলান।

এ বছরই বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে নির্বাচন হয়েছে। গত এপ্রিল-মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও ক্ষমতায় এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা ব্রিটেনকেই অচল করে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে আগাম নির্বাচন দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে জনসনের জন্য বড়ো ‘বাজি’ হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বিশাল ব্যবধানে জিতে ব্রেক্সিটের পথ সুগম করেছেন তিনি। গত ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে।

গত ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কংগ্রেসের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার দুইটি অভিযোগে তিনি অভিশংসিত হয়েছেন। ট্রাম্পের আগে অ্যান্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটন অভিশংসিত হয়েছেন। তবে তারা কেউই পদ হারাননি। এর কারণ কোনো প্রেসিডেন্টকে পদ থেকে সরাতে হলে তাকে সিনেটে দোষী সাব্যস্ত করতে হয়। আর এক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরের ভোট জরুরি।

১০০ আসনের সিনেটে এখন রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে তথ্য-প্রমাণ বিবেচনা করবেন সিনেটররা এবং প্রেসিডেন্টকে অব্যাহতি বা দোষী সাব্যস্ত করবেন তারা। হাউজে ভোটের পর বলা যায়, সিনেটে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কম। নতুন বছরে সিনেটে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সংসদীয় বিচার শুরু হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com