চলুন জেনে নেওয়া যাক দেশের বিষধর সাপ সম্পর্কে-

0

পুরো দেশ এক সাপের ভয়ে আতঙ্কিত। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখ যাচ্ছে রাসেলস ভাইপার নামের বিষধর সাপটি। এরই মধ্যে কয়েকজন মারা ও গেছেন এই সাপের কামড়ে। এমনই খবর জানা যাচ্ছে। তবে দেশে শুধু রাসেলস ভাইপার নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিষধর সাপ রয়েছে।

এসব সাপের কামড়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতে পারে মানুষ। তবে দেশের সব সাপ কিন্তু বিষধর নয়। তাই যে কোনো সাপ কামড়ালেই যে মানুষ মারা যায় তা নয়। দেশের আনাচে কানাচে ৮০ প্রজাতির সাপ ঘুরে বেড়ায়। এর মধ্যে মাত্র সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়। বাকি অন্য অনেক প্রজাতির সাপ রয়েছে, যেগুলো মানুষের থেকেই বরং দূরে থাকে।

বর্ষার সময় সাপের উপদ্রব বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রতি বন্যার সময় অর্থাৎ মে, জুন এবং জুলাই-এই তিন মাস সাপের দংশন এবং তার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে। দেশব্যাপী পরিচালিত অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) সর্পদংশন জরিপে দেখা যায়, দেশে প্রতিবছর ৪ লাখ ৩ হাজার ৩১৭ জন মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় এবং এতে ৭ হাজার ৫১১ জন মানুষ মারা যায়। প্রতিটি সর্পদংশনের কারণে চিকিৎসার জন্য দংশিত ব্যক্তির প্রায় ২ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক দেশের বিষধর সাপ সম্পর্কে-

চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার
যে সাপের নাম বর্তমানে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে, রাসেলস ভাইপার। তাকে চন্দ্রবোড়া নামেও চেনেন অনেকে। এর আরেক নাম উলুবোড়া। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বিষাক্ত। এই সাপটি প্রায় একশো বছর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, অর্থাৎ পরপর কয়েক দশকে এর একটি সাপেরও দেখা মেলেনি। কিন্তু গত ১০/১২ বছর আগে থেকে আবার এই সাপে দংশনের প্রমাণ দেখা যায়। বর্তমানে ২৭টি জেলায় এর দেখা মিলেছে নতুন করে।

কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়
একে রাজ গোখরা এবং পদ্ম গোখরাও বলা হয়। ভয়াবহ বিষধর এই শঙ্খচূড় অন্য গোখরার তুলনায় আকৃতিতে বেশ লম্বা। এর ফণায় অন্য গোখরার মতো চশমার মতো বলয় থাকে না। শঙ্খচূড় বাংলাদেশ, ভুটান, বার্মা, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এসব দেশে বেশি দেখা যায়। এই সাপ ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকায় থাকতে পছন্দ করে।

নায়া নায়া
বৈজ্ঞানিক নাম নায়া নায়া হলেও এটি কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ। এটি স্থলভূমির সাপ, এটি ফণা তোলে এবং এর ফণায় চশমার মতো দুইটি বলয় থাকে। দেশের পশ্চিম অংশেই অর্থাৎ রাজশাহী অঞ্চলের দিকে প্রধানত এ সাপের বসবাস।

কেউটে
কেউটে হলো গোখরা প্রজাতির একটি সাপ যা দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া দেখা যায়। এটিকে আইইউসিএন কর্তৃক ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ইংরেজি কোবরার আক্ষরিক অর্থ হল গোখরা। এ গোখরোর ফণার পেছনে গরুর ক্ষুরের মত দাগ থাকে যার থেকে বাংলা গোক্ষুর নামটি এসেছে। অন্যদিকে ইংরেজিতে মনোকলড অর্থ হলো একচোখা। এ সাপটিকে মনোকলড বলার কারণ এই সাপের ফণার পেছনে গোল দাগ থাকে যা দেখতে একচোখা চশমার মতো দেখতে তাই এর ইংরেজি নাম মনোকল্ড কোবরা। গোখরা প্রজাতির সাপ উত্তেজিত হলে ফণা মেলে ধরে।

ক্রেইট বা শঙ্খিনী
এই সাপকে শঙ্খিনী এবং শাঁকিনী সাপ নামেও ডাকা হয়। শ্রীমঙ্গলে দেখা মেলে এই সাপের। পৃথিবীতে ক্রেইট বা শঙ্খিনী জাতের সাপের মোট ৮টি প্রজাতি রয়েছে, এর মধ্যে ৫টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এই ক্রেইট জাতের সাপকে স্থানীয়ভাবে কেউটেও বলা হয়। এ সাপ বাড়ির আশপাশে বা লাকড়ির মধ্যে শুকনো জায়গায় থাকে।

নায়া কাউচিয়া
এটিও গোখরা প্রজাতির সাপ, স্থানীয়ভাবে একে জাতি সাপ বা জাত সাপও বলে থাকে। এই সাপটিকে জউরা নামেও ডাকা হয়। এটি মূলত দেশের পূর্ব অংশ অর্থাৎ সিলেট, নোয়াখালী এলাকায় বেশি থাকে। দেশে যত সর্প দংশনের ঘটনা ঘটে, এর কামড়ে ঘটে সর্বোচ্চ। এ সাপ উত্তেজিত হলে ফণা মেলে ধরে। সাপের ঘাড়ের লম্বা হাড় স্ফীত হয়ে ওঠে, তাতে চমৎকার ফণাটি বিস্তৃত হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com