সরকার করোনা মহামারীর সাথে মানুষের ঘাড়ে `অব্যবস্থাপনাজনিত মহামারী’ চাপিয়ে দিয়েছে: বিএনপি
নগদ আর্থিক সহায়তা বা খাদ্যের ব্যবস্থা না করে `লকডাউনে‘ মানুষকে ঘরে বন্দী থাকতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্টআওয়ামী লীগ সরকার বৈশ্বিক করোনা মহামারীর সাথে এদেশের মানুষের ঘাড়ে `অব্যবস্থাপনা জনিত মহামারী‘ চাপিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সাংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, `লকডাউন‘ বর্তমানে অকার্যকর নিষ্ঠুর রসিকতায় পরিণত হয়েছে। চলমান লকডাউন যেন বেকার হয়ে পড়া কোটি কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খাবারের অভাবে মারার অমানবিক হাতিয়ার। মহামারী ব্যবস্থাপনায় সরকারের উদাসীনতা ও বিজ্ঞানমনস্ক নীতি প্রণয়নে চরম ব্যর্থতার ফলে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় উপনীত হয়েছে।একদিকে অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীর অকাল মৃত্যু, আইসিউ সুবিধার অভাব। হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য ন্যূনতম বেড পাচ্ছে না এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও ওষুধের অভাবে জনগণের মধ্যে রীতিমত আতংকের সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত না করেই দেশব্যাপী ‘কঠোর লকডাউন’ চাপিয়ে দেয়ার সরকারের হঠকারি সিদ্ধান্তে বিশেষ করে দিন আনে দিন খায়– এ শ্রেণির মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নগদ অর্থ সহযোগিতা কিংবা খাদ্য সহায়তা ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষকে ঘরে আটকে রাখা রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে টানা লকডাউনের নামে সাধারণ ছুটি এবং এ বছরের ০৫এপ্রিল থেকে কার্যকর করা লকডাউনে কোটি কোটি কর্মহীন মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে গত ১ জুলাই থেকে প্রথমে ৭ দিন এবং পরবর্তীতে আরও ৭ দিন সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।গণপরিবহন বন্ধ। কিন্তু শিল্প কল–কারখানা খোলা। সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় দিনমজুর ও খেটে খাওয়া নিম্ম আয়ের মানুষ মহাসঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের অপরিকল্পিত ও অমানবিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত এদেশের কোটি কোটি ‘দিন আনে দিনে খায়’ মানুষের সকলের জীবনই স্থবির করে ফেলেছে। আমরা সকলেই জানি, যে কোনো দেশেই যদি প্রকৃত অর্থে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে এর ফলে যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।অন্যথা পেটের জ্বালায় মানুষকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা অসম্ভব এবং তাতে লকডাউনের উদ্দেশ্যই ব্যহত হতে বাধ্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ কাজ করে। যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। এর বাইরে আমরা যদিদোকান কর্মচারী কিংবা পরিবহন খাতের লোক জনদের ধরি, তারাও একটা বড় অংশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে যত লকডাউন হয়েছে তাতে দেখা গেছে “দিন আনে দিন খায়” মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে।তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় ক্ষুধার তাড়নায় এসব মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নগদঅর্থ/ন্যূনতম খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত না করেই কঠোর লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত কোনোক্রমেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয় এবং এটাফলপ্রসূও হবে না। কারণ, লকডাউন কার্যকর করতে গেলে তার পূর্বশর্ত গুলো পূরণ করতে হয়।’
তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই লকডাউনে দরিদ্র শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার জন্যে কয়েক মাস ধরেলা গাতার ভাবে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। ইংল্যান্ডে লকডাউনের কারণে যারা বেতন পায়নি তাদের জন্য সরকার আইন করে সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও নাগরিকদের একাউন্টে আগে নগদ অর্থ জমা দিয়ে অর্থাৎ খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করেলকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নগদ অর্থ সহায়তা দিলে দেখা যেত, এই জনগোষ্ঠীর কেউআর ঘর থেকে বের হবে না। নগদ অর্থ বা খাদ্য না দিয়েই যদি তাদের ঘরে আবদ্ধ থাকতে বলা হয়, তাতে একটা ডেসপারেট সিচুয়েশন তৈরি হতে বাধ্য। মানুষ তথন টিকে থাকার প্রয়োজনে নানা ধরনের পথ খুঁজবে– এটাই স্বাভাবিক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কার্যকর অর্থেই একটা অমানবিক সরকার, তা এবার কঠোর লকডাউনে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তার অর্থের অংকেই বোঝা গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৭ জুন লকডাউনে দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দিতে ৬৪ জেলার অনুকূলে মাত্র ২৩ কোটি ছয় লাখ৭৫ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে আরো ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বলা হয়েছে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে মানবিক সহায়তা পাওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তিদের এই বরাদ্দ থেকে খাদ্য–সহায়তা দেওয়া হবে, যার মধ্যে থাকবে ১০ কেজি চাল, এক কেজি তেল, এক কেজি ডাল, পাঁচ কেজি আলু ও এক কেজি লবণ। মূল্য নির্ধারণ হিসেবে টাকার অংকে যা ১ হাজার টাকার মতো দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, বরাদ্দকৃত মোট অর্থের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব। যেখানে করোনাকালে দুই কোটির বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এর সঙ্গে যদি আগের সংখ্যা যুক্ত করা হয়, তাহলে কমপক্ষে পাঁচ–ছয় কোটি হবে। তাহলে কঠোরতম এই লকডাউনে সরকার ঘোষিত বরাদ্দকৃত অর্থ একেক জনের ভাগে চার থেকে পাঁচ টাকারবেশি পড়ার কথা নয়। যা মহামারী কালে জনগণের সাথে স্রেফ তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই ভয়াবহ করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে চলমান লকডাউন কালে দরিদ্র, দুঃস্থ ও কর্মহীনজনগোষ্ঠী অর্থাৎ দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, হকার, প্রান্তিক কৃষক এবং যেসকল নিম্নবিত্ত ইতোমধ্যে দরিদ্রের কাতারে নেমে পড়েছে তাদের চিহ্নিত করে তাদেরকে ঘরে রাখার প্রয়োজনে প্রত্যেককে অবিলম্বে এককালীন নগদ ১৫ হাজার টাকা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের জিডিপি’র ৬–৭% অর্থাৎ বর্তমান ৬ লক্ষ কোটি টাকার বিরাট বাজেটের একটি সামান্য অংশ এ খাতে বরাদ্দ করলেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দেয়া সম্ভব। যা দরকার সেটাহ’ল সরকারের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। ঐক্যবদ্ধ ভাবে এ মহাসঙ্কট মোকাবেলার জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে পুনরায় উদাত্ত আহবান জানাই।