ফ্যাসিজম যখন আসে কেউ রক্ষা পায় না: বিএনপি

0

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোজিনা ইসলামের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সামগ্রিক বাংলাদেশের চেহারার একটি অংশ। তিনিই একমাত্র ভিকটিম নন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একেরপর এক সাংবাদিকদের ওপরে অত্যাচার নির্যাতন নেমে এসেছে। সংবাদপত্রের ওপর অত্যাচার নির্যাতন নেমে এসেছে। সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের বিদেশে চলে যেতে হয়েছে। এমনকি হত্যাও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরাতো কখনও সংবাদপত্র গুলোকে সোচ্চার হতে দেখিনি যে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।কেন হয়নি হয়তোবা ধরে নিয়েছেন আমার ওপরে এখনও আসেনি। এখন আপনাদের ওপরে এসেছে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানও বাদ পড়েননি। হত্যা মামলা হয়েছে। মাহফুজ আনামের মতো সম্পাদককেও ১২৫টা মামলা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। ফ্যাসিজম যখন আসে, কেউ রক্ষা পায় না। এটাই বাস্তবতা।

গতকাল বৃহস্পতিবার, মে ২০, ২০২১, বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “রোজিনা ইসলামের পক্ষে সব সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন শুনলাম। এই ঐক্য কতক্ষণ টিকবে? সাগররুনি হত্যাকাণ্ডের পর দুই পক্ষই তারা এক সাথে রাস্তায় নেমেছিল, / দিনও যায়নি। একজন উপদেষ্টা হয়ে গেছেন সরকারের, আর কয়েক জনকে হালুয়ারুটি দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত হালুয়ারুটির সন্ধানে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফেভারের সন্ধানে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রোজিনা ইসলামের মতো সাহসী সাংবাদিক, যারা নিজের জীবন বিপন্ন করে সত্য কথা গুলো তুলে ধরে, তাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না, এটাই বাস্তবতা।

রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি শেষ হলেও বিচারক আদেশের জন্য রোববার দিন রেখেছেন।জামিন আদেশ বিলম্বিত করার ঘটনাকেপুরনো চর্চাবলে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “কোথায় যাবেন? জুডিশিয়ারি! আজকে রোজিনা ইসলামের জামিনের শুনানি হয়েছে, রায় দেবে রোববার। সেইম ওল্ড প্র্যাকটিস।

মির্জা ফখরুল বলেন, “দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল, যারা একসময় জনগণের ভিত্তি ছিল, তারা জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে, তাদের কাছে এখন জনগণ কেউ নয়। তারা জনগণের পাশেও নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যখন আমাদের লোকজনদেরকে ধরে নিয়ে যায়, রিমান্ডে দেয়, মারধর করে, নির্যাতন করে, গুম করে, খুন করে তখন আমরা দেখি, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অনেক সংবাদ মাধ্যম সেগুলো সম্পর্কে নিরব থাকে। কেউ কেউ আবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সেটাকে ডিফেন্ড করে। এই জিনিস গুলো কিন্তু ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।

আজকে অলিউল্লাহ নোমান লন্ডনে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, আজকে মাহমুদুর রহমানকে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে, শফিক রেহমানকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমি এটাও বলতে শুনেছি যে, মাহমুদুর রহমান কোনো সাংবাদিক নন, সম্পাদক নন, এটাও বলতে শুনেছি শফিক রেহমান তো আসলে কোনো সাংবাদিক নন। এই যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, শৃঙ্খলিত গণমাধ্যম, মুক্তির পথ কী?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আজকে গণমাধ্যম যে বন্দি তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি প্রমাণ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন, হেনস্তা অপমানের ঘটনা, সর্বশেষে তাকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে।

আমি মনে করি বাংলাদেশে যে সরকার রয়েছে, এই সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার। তাদের বাকশাল প্রতিষ্ঠার ফ্যাসিবাদী চরিত্রের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রতিফলন হচ্ছে রোজিনার ঘটনা।

রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকারের চরিত্র আবারও সামনে এসেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, রোজিনাকে ধরতে তারা মুখিয়ে ছিল।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের গোপন নথি কীভাবে সচিবের পিএসের টেবিলে খোলা পড়ে থাকে? স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি এটাকে গোপন নথি, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর মনে করেন, তাহলে তাঁর ও মন্ত্রণালয়ের সবার চাকরি চলে যাওয়া উচিত।

আমীর খসরু বলেন, রোজিনার সঙ্গে যা হচ্ছে, তা দেশের বর্তমান বাস্তবতায় অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “আজ রক্তবীজের ছাপ কিন্তু সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। এই জেবুন্নসাকে যেরকম দেখেছেন, এই জেবুন্নেসা হচ্ছে আমাদের সামনে এই চরিত্র যে, আমলাতন্ত্রে জেবুন্নেসায় ভরে গেছে।

শেখ হাসিনা বিদায় হলেও, শেখ হাসিনার চাইতেও বড় বিপদ হবে তারা (আমলা) তারা রক্তবীজের ঝাড়রাই কিন্তু এই স্বৈরাচারকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, এই সরকার কখনোই গণমাধ্যম বান্ধব ছিল না। গত ১২ বছরে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের একটা চক্র গড়ে উঠেছে।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসানমাহমুদ টুকু, মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

সাংবাদিকদের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, বর্তমান সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ও মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান আলোচনায় অংশ নেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com