সরকারের উদাসীনতা ও সীমাহীন ব্যর্থতায় দেশ আজ বিপদসঙ্কুল পথে: মির্জা ফখরুল
সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতা আজ পুরো দেশকে এক বিপদ সঙ্কুল পথে নিয়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেনবিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা শনাক্ত এবং মহামারী আকারে সংক্রমণের পর সারা বিশ্বের জনবান্ধব রাষ্ট্রগুলো যখন সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে বাংলাদেশের সরকার তখন স্বভাব সূলভ বলতে শুরু করে, ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী’, ‘যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সে দেশে করোনা কিছুই করতে পারবে না’- এসব উন্মাদীয় বক্তব্য দিয়ে তারা জনগণের সাথে প্রতারণা শুরু করে এবং করোনা প্রতিরোধে সামান্যতম উদ্যোগ গ্রহণ না করে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে বিভোর থাকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকারি ভাবে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ, ২০২০ তারিখে। এসময় সারা পৃথিবীতে যখন বিমান চলাচল সীমিত এবং যাত্রী প্রবেশে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করলো, বাংলাদেশ তখনো এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন ও নির্বিকার থাকলো। করোনাক্রান্ত দেশ চীন, ইতালি, স্পেন মধ্যপাচ্য থেকে প্রচুর প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়ায় কিংবা নাড়ীর টানে দেশে ফিরেআসে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হৈচৈ শুরু হলে তারা বললো, করোনা প্রতিরোধে বিমান বন্দরে পর্যাপ্ত থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে।অথচ দেখা গেলো একটি ছাড়া সবগুলো থার্মাল স্ক্যানারই ছিল নষ্ট। অনেকটা যথাযথ করোনা পরীক্ষা ছাড়াই বিদেশ থেকে বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ দেশ থেকে আসা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ প্রবাসী দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এটাই হলো সরকারের করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ব্যর্থতা।
শুরু থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারের অসহায়ত্ব ও চরম সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান দাবিকরে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না।পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না। লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়।পোশাক শিল্পের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবগত নয়। কোভিড, নন–কোভিড হাসপাতাল নির্ধারণ, চিকিৎসকগণ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম ছিল চরম হতাশাব্যঞ্জক।
তিনি বলেন, বিজ্ঞানসম্মত ও কৌশলগত পরিকল্পনার অভাবে দেশের করোনা পরিস্থিতি ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে। চীনা বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ডা: ওয়েন বিওয়ের মতে, ‘বাংলাদেশে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো কাজ হয়েছে।’ এভাবে ভাইরাস মোকাবিলা করাসত্যিই কঠিন। কার্যকর লকডাউন, দ্রুত বেশি সংখ্যক পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তরণ সম্ভব ছিল কিন্তু তা করা হয়নি। আমরা তখনো এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেও সরকারের একগুঁয়েমির কারণে তা সম্ভব হয়নি, ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনার প্রথম ওয়েভে সরকারের নীতি ছিল ‘নো টেস্ট নো করোনা’। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ করোনা টেস্টের তালিকায় সর্বনিম্ন। প্রথম আলো পত্রিকার সূত্রমতে, বাংলাদেশের অবস্থান শুধুমাত্র আফগানিস্থানের উপরে।বাকি সবার নিচে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৪৬টি জেলায় করোনা পরীক্ষার কোনো ল্যাবই ছিল না। তাছাড়া কীটের সংকটে ঢাকাও নারায়ণগঞ্জের ল্যাবেই পরীক্ষা বন্ধ ছিল। অন্যদিকে সঠিক পরীক্ষা ও যথাযথ রিপোর্ট প্রদানে জাল–জালিয়াতি, দুর্নীতি ও চরমআস্থার সংকট জনগণকে করোনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করেছে।
এ সময় তিনি জানান, ৭ এপ্রিল, ২০২১ তারিখের ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০ লাখে ২৯ হাজার ২২৫ জন; ভারতে১ লাখ ৮০ হাজার জন; শ্রীলঙ্কায় ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪১জন; নেপালে ৭৭ হাজার ৬৭৩ জন; ভুটানে ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭৪জন; ইন্দোনেশিয়ায় ৪৭ হাজার ৬৩৩ জন; ফিলিপাইনে ৯৪ হাজার ৪৯৪ জন, মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১ জনমানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়। করোনা পরীক্ষায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখতে পাই, ২০২০ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দেশে করোনা পরীক্ষার যে তথ্য উল্লেখ রয়েছে তাতে টেস্ট করা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৭০৩ জন। অন্যদিকে, ২০২১ সালের একই সময়ে অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে টেস্ট করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ৫০ হাজার।