আবরার হত্যা মামলায় আজ সাক্ষ্য নেবেন আদালত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ (৩১ জানুয়ারি) দিন ধার্য রয়েছে।
গত সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও আদালতের স্টেনোগ্রাফার অসুস্থ থাকায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত নতুন এ দিন ধার্য করেন।
ওইদিন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ সহকারী কৌঁসুলি (পিপি) প্রশান্ত কুমার হালদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।
এর আগে গত রবিবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে এ মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) লালবাগ জোনের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের সাক্ষ্য শুরু হয়। তিনি এ মামলার ৪৬তম সাক্ষী। তার সাক্ষ্য শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য সম্পন্ন হবে।
এরপর আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষীর পরীক্ষা শেষে আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হবে।
মামলায় বেশ কয়েকজন আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি এরইমধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়াও বুয়েটের সহকারী চিফ মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মাসুম এলাহী ও মামলার রেকডিং কর্মকর্তা এসআই সোহরাব হোসেনও সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গেল বছরের ৫ অক্টোবর বহুল আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। ওইদিন আদালতে জবানবন্দি দেয়ার সময় ছেলের হত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ আদালতকে বলেন, ‘আসামিরা আমার ছেলেকে ৬ ঘণ্টা ধরে অমানবিক নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আামি আদালতে হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই।’
গেল বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। এর আগে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর আবরার হত্যার মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী ২৫ আসামির অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানি করেন। তবে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে-বাংলা হলে নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। নিহত আবরার বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহর বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও তদন্তকালে এজাহার বহির্ভূত আরও ৬ জনকে মামলার আসামি করা হয়।
আবরার হত্যা মামলার ২৫ আসামি হলেন- বহিষ্কৃত বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
তাদের মধ্যে প্রথম ২২ জন কারাগারে ও শেষের ৩ জন পলাতক আছেন। এর মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর ৫ দিন পর ১৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত।
এর পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় সিএমএম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হলে গত বছরের ২১ জানুয়ারি দায়রা জজ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করে চার্জ গঠনের দিন ধার্য করেন।