ট্রাম্পকে ৪০ বছর ধরে নিজেদের মতো গড়ে তুলেছেন পুতিন, কেজিবি

0

তথ্যবোমা ফাটালেন মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক ক্রেইগ উঙ্গার। তিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ৪০ বছর ধরে ‘গ্রুমিং’ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অর্থাৎ পুতিন তার নিজের মতো করে গড়ে তুলেছেন ট্রাম্পকে। এমনটা দাবি করে নতুন একটি বই লিখেছেন ক্রেইগ উঙ্গার। বইটির নাম ‘ইন আমেরিকান কোমপ্রোম্যাট: হাউ দ্য কেজিবি কাল্টিভেটেড ডনাল্ড ট্রাম্প, অ্যান্ড রিলেটেড টেলস অব সেক্স, গ্রিড, পাওয়ার, অ্যান্ড ট্রেচরি’। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে একটি বৃটিশ মিডিয়া। এতে বলা হয়েছে, চমৎকার সব বন্ধুত্ব অনেক সময় সামান্য দিয়ে সূচনা হয়। ৪০ বছরেরও আগে ডিসকাউন্ট দেয়া নিউ ইয়র্কের একটি ইলেকট্রিক্যাল দোকানে টেলিভিশন কিনতে গিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

সেই ঘটনাই তার সবচেয়ে জটিল সম্পর্কের বীজ বপন করে। এই সম্পর্ক তাকে যুক্ত করে ক্রেমলিনের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে সেই সম্পর্ক তাকে টেনে নিয়ে যায় ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে। পুতিনকে অনেকভাবে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্রেইগ উঙ্গার তার নতুন বইয়ে দাবি করেছেন, তখন ট্রাম্প একজন যুবক। তিনি কোমল মনের। কমপক্ষে ৪০ বছর আগে এ সময় থেকেই তাকে ‘গ্রুমিং’ বা নিজেদের মতো করে বানিয়ে নিতে থাকে রাশিয়ার তখনকার দুর্দান্ত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। বার বার তাকে তারা আর্থিক ধ্বংসস্তূপ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ইতিহাসে গোয়েন্দা অপারেশনের সবচেয়ে সফলতা পায় তারা। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে- যেকোনভাবেই পুতিন যা চাইতেন, ট্রাম্প তাতেই পরিণত হতেন। কুখ্যাত জেফ্রে এপস্টেইনের সঙ্গে ১৫ বছরের বন্ধুত্বের মাধ্যমে পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।
ক্রেইগ উঙ্গার এ যাবত বেশ কিছু বেস্টসেলার বই লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- হাউজ অব বুশ, হাউজ অব সাউদ, হাউজ অব ট্রাম্প, হাউজ অব পুতিন। এসব বইয়ে বিশ্বের অভিজাত শ্রেণির রুচিহীন সম্পর্কের বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। তবে ট্রাম্প ও পুতিনকে নিয়ে লেখা বইয়ে তিনি উচ্চপর্যায়ের কয়েক ডজন গোয়েন্দা ও সরকারি সূত্রের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লিখেছেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন কেজিবির সাবেক একজন মেজর ইউরি শভেটস। তিনিই ক্রেমলিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়ে প্রথম তথ্য দিয়েছেন। সাবেক সোভিয়েত আমলের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তিনিই প্রথম এমন তথ্য দেয়া প্রথম ব্যক্তি। তবে ক্রেইগ উঙ্গার তার বইয়ে যেসব দাবি উত্থাপন করেছেন, সে বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রশ্ন খুব জোরালো আছে। তা হলো, প্রেসিডেন্সির সময়ে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্প কেন এতটা নমনীয় ছিলেন?
ট্রাম্প শুধু সিরিয়া থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেননি, জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতিই কমিয়ে এনেছেন। এক্ষেত্রে তিনি একা নন, একই লক্ষ্য ছিল পুতিনেরও। তবে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের হত্যার জন্য অর্থ ঘোষণা করেছিল রাশিয়া- এমন রিপোর্টের বিষয় তিনি এড়িয়ে গেছেন। ২০১৮ সালে হেলসিংকির সামিটে যোগ দেন ট্রাম্প। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুতিনও। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই স্পষ্ট করে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের রিপোর্ট দিলেও ট্রাম্প রাশিয়ার ভাষায়ই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেনি।
এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাবেক মেজর ইউরি শভেটস। তিনি ১৯৮০-এর দশকে ফিরে গিয়েছেন। বলেছেন, মূল্যবান একটি সম্পদ হিসেবে ওই সময় থেকেই ট্রাম্পকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলা শুরু করে কেজিবি। কেজিবি মনে করেছিল, একদিন তাকে ব্যবহার করতে পারবে মস্কো। সাংবাদিক ক্রেইগ উঙ্গারকে শভেটস বলেছেন, যখন কেজিবি বা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা শুরু করলো জনগণ, অনেকেই তখন এই অতি পরিশীলিত মাস্টারপ্লানের দিকে ফিরে তাকান। এই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল কয়েক দশক আগে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত দফায় তারা তাদের সেই ক্লাইম্যাক্স দেখিয়েছে। মেজর ইউরি শভেটজ বলেন, বাস্তবতা হলো, ধীর ধীরে কয়েক দশকে রাশিয়ার ফাঁদে পড়ে যান ট্রাম্প। কেজিবি ছিল অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল। তারা একটি ইস্যুতে অনেক বছর ধরে কাজ করে।
এ ছাড়া রাশিয়ায় অনেক বছর ধরে সন্দেহজনক অনেক ব্যবসা ভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রয়েছে নানা রকম শাসকগোষ্ঠী, দস্যু প্রকৃতির মানুষ এবং ২০১৩ সালে মস্কোতে নিজের মালিকানাধীন মিস ইউনিভার্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনে তার সম্পর্ক। ক্রেইগ উঙ্গার বলেন, এসব ঘটনাকে রাশিয়ার গোয়েন্দা অপারেশন হিসেবে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ক্রেমলিন যদি ‘না’ বলে দিতো, তাহলে এর কোনোটাই ঘটতো না।
১৯৮০ সালে এসব সম্পর্কের সূচনা। ওই সময় ম্যানহ্যাটানে গ্রান্ড হায়াত হোটেল চালু করেন ট্রাম্প। এটাই তার বড় কোনো প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট। এই হোটেলের জন্য তার প্রয়োজন ছিল কয়েক শত টেলিভিশন সেট। এ সময়ে সেখানকার ফিফথ এভিনিউয়ে একটি ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান অল্প পরিমাণ ডিসকাউন্ট দিচ্ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম জয়-লুড ইলেকট্রনিক্স। এর মালিক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে যাওয়া দুই ইহুদি অভিবাসী। এই প্রতিষ্ঠান থেকে লোভনীয় ব্যবসা চালু করা হয়। সফরকারী সোভিয়েত কর্মকর্তাদের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম সহ সফরের আয়োজন করতো তারা। এতে আখেরে লাভবান হয় রাশিয়া।
মেজর ইউরি শভেটসের মতে, ‘এই দোকানটি ছিল কেজিবির একটি ফ্রন্ট। ওই দোকানের মালিকরা যখন ট্রাম্পের বিষয়ে তাদের ব্যুরোতে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে বিস্তারিত পাঠিয়ে দেন, তখনই ট্রাম্প কেজিবির রাডারে ধরা পড়েন- এ বিষয়ে আমি শতকরা ৯৯ ভাগ নিশ্চিত’। কেজিবির শ্রেণিবিন্যাসের অধীনে ট্রাম্প হয়ে ওঠেন তাদের ‘বিশেষ আনঅফিসিয়াল কন্ট্যাক্ট’। এটা ছিল এক বিরল আস্থার যোগাযোগ, যা কেজিবির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। বইটির লেখক ক্রেইগ উঙ্গার বিশ্বাস করেন, সোভিয়েতের জন্য ট্রাম্প ছিলেন খুব বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন। কারণ, তার ব্যক্তিত্ব ছিল বাজে, আত্মমুগ্ধতামূলক, চাটুকারদের প্রতি উচ্চ মাত্রায় সংবেদনশীল এবং লোভী। তবে তাকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে কিনা তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। কিন্তু কেজিবি সাধারণত অর্থ বিনিয়োগ করে এসব কাজ করে থাকে। বিষয়টা এমন যে, আপনি দেয়ালে স্প্যাগেটি ছুড়ে মারলেন এবং তাকিয়ে দেখলেন তার কতটা লেগে থাকে।
মেজর ইউরি শভেটস বলেন, কেজিবি কর্মকর্তাদের কাছে একটি স্বপ্ন ছিলেন ট্রাম্প। তারা তাকে একটি গোয়েন্দা সম্পদ হিসেবে দেখতে থাকে। প্রতিজন মানুষেরই কিছু না কিছুর প্রতি দুর্বলতা থাকে। কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে বিষয়টি শুধু দুর্বলতা নয়। একই সঙ্গে প্রতিটি বিষয়ে তিনি বাড়াবাড়ি করতেন। তার ছিল অহংকার। তা ছিল অতিমাত্রায়। আত্মরতি আছে অতিমাত্রায়। লোভ আছে অতিমাত্রায়। অজ্ঞতা আছে অত্যধিক। সাংবাদিক উঙ্গার বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও এই একই কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিআইএ’র সাবেক এজেন্ট গ্লেন কারলে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওই সময়কার ভবিষ্যত প্রেসিডেন্টকে রাশিয়ার জন্য অবিশ্বাস্যরকম ঝুঁকিতে থাকা বলে মনে করতে থাকে রাশিয়া।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com