পিকে হালদারের হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার ও লোপাটের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে।
দুদক বলছে, ৬২ জন সহযোগীর মাধ্যমে অর্থপাচার করেছেন পিকে হালদার। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানিয়েছিল, ‘পিকে হালদারের ৭০ থেকে ৮০ জন গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। এসব গার্লফ্রেন্ডের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।’
এদিকে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) পিকে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় দুদক। বুধবার সকালে রাজধানরি ধানমন্ডি থেকে অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রশান্ত কুমার হালদার দেশের ব্যাংক পাড়ায় পিকে হালদার নামেই পরিচিত। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিডেটের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিকে হালদার) ১৩ পরিচালকের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকে দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে পিকে হালদারের মা, স্ত্রী ও ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি পিকে হালদারসহ ওই ২০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং তাদের গত ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আইএলএফএসএলের দুজন পরিচালক আপিল বিভাগে আবেদন করলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
এ অবস্থায় পিকে হালদার দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে কানাডায় আশ্রয় নেন। এবার তিনি দেশে ফেরার আবেদন জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি আইএলএফএসএলকে একটি চিঠিও দিয়েছেন বলে আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিলায়েন্স ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাবস্থায় আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে সারা দেশে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলের পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তিনি ও তার সহযোগীরা সাধারণ আমানতকারীদের কাছ থেকে কৌশলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এরমধ্যে আইএলএফএসএল থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। এসব অর্থ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান তিনি।
এরইমধ্যে ৩৬০০ কোটি টাকা নিয়ে পালানো পিকে হালদার দেশে ফিরতে চান মর্মে গেল বছরের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদন করেন পিকে হালদারের আইনজীবী।
এদিকে গত ৫ জানুয়ারি পিকে হালদারের মা’সহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। পিকে হালদারকে ধরতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ, একইদিন আদালতকে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।