‘সৌদি-তুরস্ক-পাকিস্তান-ইন্দোনেশিয়া’ জোট

0

‘সৌদি-তুরস্ক-পাকিস্তান-ইন্দোনেশিয়া’ জোট হলে ওআইসিভুক্ত বেশির ভাগ মুসলিম দেশ এই বলয়ে অবস্থান নিতে পারে। আর একই সাথে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্থনীতি বাজার বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে বিশেষ সহযোগিতার প্রক্রিয়া তৈরি করবে। এই জোটটি ইরানকেন্দ্রিক শক্তি বলয়ের সাথে সঙ্ঘাতের বিষয়গুলোকে যথাসম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে। ইসরাইলকেন্দ্রিক আমিরাতের নেতৃত্বাধীন বলয়ের সাথেও সঙ্ঘাত পরিহার করার চেষ্টা করবে।

মধ্যপ্রাচ্যে এবং একই সাথে ওআইসিভুক্ত মুসলিম দেশগুলোর নীতিনির্ধারণে সৌদি আরব দীর্ঘকাল ধরে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা ক্ষেত্রে এই ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। বিষয়টির পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সংযুক্ত আরব-আমিরাতের উচ্চাভিলাষী ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন জায়েদ সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সৌদি আরবকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রান্তিক অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এতে ইয়েমেন সিরিয়া লেবাননসহ সার্বিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি নীতিগুলো একের পর এক ব্যর্থতার পর্যবসিত হতে শুরু করে। আর মুসলিম বিশ্বের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র থেকে রিয়াদের স্থান দখলে এগিয়ে যেতে থাকে আবুধাবি।

বিষয়টি এতটাই এগোয় যে, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আরব আমিরাত বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে অগোচরে রাখে। আর আমিরাতকে অনুকরণ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্গীকার ছাড়াই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার জামাতা জ্যারেড কুশনারকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হতে থাকে। রিয়াদকে বলা হয়, ‘ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দেশটির নেতৃত্বে বহাল থাকছেন আর ট্রাম্প নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসছেন’।

সৌদি বাদশাহ সালমান ও তার উপদেষ্টারা এই চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল কী হয়, সেটি দেখার জন্য পরামর্শ দেন। আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলে ইসরাইল-আমিরাতের বক্তব্য অসত্য প্রমাণিত হয়। ট্রাম্প শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই হেরে যাননি, একই সাথে কংগ্রেসের দুই কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি সভার নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছেন। এর পর উগ্র অনুসারীদের উসকে দিয়ে কংগ্রেসে রক্তক্ষয়ী হামলা চালানোর জন্য দুই সপ্তাহের কম সময় বাকি থাকতেই এখন অভিশংসনের মুখে পড়ছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই দুর্গতি মধ্যপ্রাচ্যে তার কার্যক্রমের ওপর কমবেশি প্রভাব ফেলতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে মুহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রভাব কমে গিয়ে বাদশাহ সালমানের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ হতে দেখা যাচ্ছে। একই সাথে কাতারের ওপর অবরোধ প্রত্যাহার, তুরস্কের সাথে সমঝোতা, ইসরাইলের নির্দেশিত আমিরাতি পথে গমন- সব ইস্যুতে সৌদি নীতিতে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।

মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করার পর আমিরাত তার ‘নিজস্ব গেম’ খেলতে শুরু করে। সৌদি অবস্থানকে সঙ্ঘাতমুখর অঞ্চলে ঠেলে দিয়ে ইয়েমেনে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এডেন বন্দর ও এর চার পাশের অঞ্চলগুলোতে আমিরাত তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সৌদি আরব সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একসময় অনেকটা একক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিল। আমিরাতি পরামর্শে রিয়াদ সিরিয়া থেকে হাত গুটিয়ে নেয়ার পর এখন দেখা যাচ্ছে, সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো টুলস আর সৌদি আরবের হাতে নেই।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com