আশার মৃত্যু, ১৫ ফুটেজেও শূন্য ফলাফল
অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে ঘাটক ট্রাকের ১৫টি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ওইগুলো যাচাই-বাছাই করে ট্রাকের নম্বরটি শনাক্ত করা যায়নি। ফলে দুর্ঘটনায় পর ৬ দিন চলে গেলেও চালককে গ্রেফতার তো দূরের কথা শনাক্তই করা যায়নি।
আলোচিত এই দুর্ঘটনার পর দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহান আহমেদ বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছি। তবে এখনো ঘাতক ট্রাকটিকে শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত হলে চালককে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।’
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় এলাকা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মোট ১৫টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এক এলাকা থেকে যখন ট্রাক আরেক এলাকায় গেছে সেই অনুযায়ী ফুটেজ কম্পাইল করে যাচাই-বাছাই করেছে পুলিশ। বেশ কয়েকটি ক্যামেরায় ট্রাকের সামনের ও পেছনের দিক স্পষ্টভাবে দেখা গেলেও নম্বরপ্লেটটি ছিল অস্পষ্ট। কোনোভাবেই নম্বর প্লেট শনাক্ত করা যায়নি। নম্বর সংগ্রহ করতে পারলে অন্তত ট্রাকের মালিকের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এগোনো যেতো। তবে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। আশার মৃত্যুর পর তদন্ত যেই অবস্থায় ছিল, এখনও একই অবস্থাতেই আছে।
এসআই সোহান আহমেদ বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর তদন্ত আরো স্পষ্ট হবে তবে আমরা সবদিক থেকেই তথ্য সংগ্রহ করছি।’
৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আশা। আর ৬ জানুয়ারি আগের বছরের সড়ক দুর্ঘটনার একটি চিত্র তুলে ধরে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। তাদের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারাদেশে সর্বমোট ৪ হাজার ৯২টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আর এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৬৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৫ জন। ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে কম দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- গতবছরটি ছিল করোনা মহামারির বছর। এই বছরের একটা লম্বা সময় জরুরি যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ।
মৃত্যুর আগে আশা যেই মোটরসাইকেলে ছিলেন সেটি চালাচ্ছিলেন তার দূর সম্পর্কের ‘ভাই’ শামীম আহমেদ। দুর্ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে শামীমকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের আবেদনে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তদন্ত সূত্র জানায়, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শামীম বলেন, ‘আশা আমার মোটরসাইকেলে ছিল। আমি তাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছিলাম। আমরা যখন মোড় ঘুরার অপেক্ষায় ছিলাম কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে একটি ট্রাক আমাদের ধাক্কা দিল, আমি ডানে পড়ে গেলাম। দেখছিলাম ট্রাকটি আশাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি উঠে তার সামনে যেতে যেতে সে মারা গিয়েছিল।’
আশার সাথে সম্পর্কের বিষয়ে শামীম পুলিশকে জানায়, ‘আশা আমার পূর্ব পরিচিত। আমি নির্দোষ, ট্রাকটি যে আমাকে ধাক্কা দেবে এটি আমি আগে থেকে টের পাইনি।’
পুলিশি তদন্তে এ পর্যন্ত শামীমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলেও আশার পরিবার এখনো বলছে দুর্ঘটনায় শামীমের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। আশার বাবা আবুল কালাম বলেন, আমাদের সবারই সন্দেহ হচ্ছে শামীম ইচ্ছাকৃতভাবে আশাকে দুর্ঘটনার কবলে ফেলেছে। কারণটা পুলিশকে বের করতে হবে। তাই আমরা চাই তাকে পুলিশি হেফাজতেই রাখা হোক।
তার বাবা জানান, মৃত্যুর দিন আশাকে রাত ১০টার মধ্যে বনানী থেকে মিরপুরে বাসায় পৌঁছে দেবে বলে শামীম তাকে জানিয়েছিল। কেন রাত ১টা ৩৬ মিনিটে সে মিরপুরে ছিল একথার উত্তর এখনও জানা যায়নি। তিনি পুলিশকে এ বিষয়ে আরো গভীর তদন্ত করার আহ্বান জানান। তদন্তের বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত অভিযুক্তের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
সেদিন যা ঘটেছিল
৪ জানুয়ারি মধ্যরাতে দুর্ঘটনার সময় পেছনে থাকা একটি গাড়ির ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পিকআপের পেছনে মোড় ঘুরতে দাঁড়িয়েছিল আশাকে বহন করা মোটরসাইকেলটি। হঠাৎ করে দ্রুতগতির একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে চালক ডান দিকে এবং আশা বাম পাশে ট্রাকের সামনে গিয়ে পড়েন। ট্রাকে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এ টেলিভিশন অভিনেত্রী। থেঁতলে যায় মুখ। সাথে সাথেই মোটরসাইকেল চালক দৌড়ে গিয়ে দেখেন সড়কে পড়ে আছে আশার নিষ্প্রাণ দেহ। ঘটনার পরদিন ৫ জানুয়ারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।