ব‌রিশালে পু‌লিশি নির্যাত‌নে যুবকের মৃত্যুর অভি‌যোগ

0

ব‌রিশালে পু‌লি‌শের নির্যাত‌নে রেজাউল ক‌রিম রেজা (৩০) না‌মে সদ্য এলএল‌বি পাস করা এক যুবকের মৃত্যুর অভি‌যোগ পাওয়া গে‌ছে।

শ‌নিবার (২ জানুয়ারি) দিনগত রা‌তে ব‌রিশাল শের-ই-বাংলা মে‌ডি‌ক্যাল ক‌লেজ (শেবাচিম) হাসপাতা‌লে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি ক‌রে‌ছেন নিহত রেজাউল ক‌রিম রেজার স্বজনরা।

ব‌রিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বল‌ছে, আসামি রেজাউলকে নির্যাত‌নের বিষয়টি তা‌দের জানা নেই। কিন্তু কারাগা‌রে আসা কাগ‌জে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ ছি‌ল। আর তার দুই পা‌য়ের বাহু‌র ফাঁক থে‌কে রক্তক্ষরণ হ‌চ্ছি‌লো। এ কার‌ণে তা‌কে হাসপাতা‌লে ভ‌র্তি করা হয়। রেজাউল ব‌রিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়া‌র্ডের হা‌মিদ খান সড়‌কের বা‌সিন্দা ও ব্যবসায়ী ইউনুছ মুন্সীর ছে‌লে। তিনি সম্প্রতি এলএলবি পাস ক‌রে‌ছেন।

নিহত রেজাউলের ফুপা তা‌রেক মিয়া জানান, রেজাউল‌কে ব‌রিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়া‌র্ডের হা‌মিদ খান সড়কের এক‌টি চা‌য়ের দোকা‌নের সাম‌নে থে‌কে ঘটনার দিন রাত ৮টার দি‌কে বরিশাল মহানগর গো‌য়েন্দা পু‌লি‌শের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ম‌হিউদ্দিন মা‌হী আটক করেন। এ সময় এসআই ম‌হিউদ্দিন রেজাউলের কাছে দুইজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জান‌তে চান। ত‌বে রেজাউল কিছু জা‌নেন না ব‌লে জানা‌লে এসআই ম‌হিউদ্দিন নি‌জের গা‌ড়ির কা‌ছে যান এবং সেখান থে‌কে ফি‌রে রেজাউলের প‌কে‌টে হাত দি‌য়ে এক‌টি নেশা জাতীয় ইন‌জেকশন পায় ব‌লে জানান তিনি। পরে তা‌কে আটক করে নি‌য়ে যান এসআই ম‌হিউদ্দিন।

নিহত রেজাউলের বাবা ইউনু‌স মুন্সী জানান, রেজাউলকে আটকের সময় ঘটনাস্থ‌লে আমি আমার ছে‌লে‌কে আটক করার কারণ জান‌তে চাই এসআই ম‌হিউদ্দিনের কা‌ছে। কিন্তু এসআই ম‌হিউদ্দিন কিছু না বলে জিজ্ঞাসাবা‌দের কথা ব‌লে রেজাউল‌কে নি‌য়ে যান। তখন রেজাউল সুস্থ ছিলেন। প‌রে জান‌তে পা‌রি রেজাউল‌কে গাজাসহ আটক করা হ‌য়ে‌ছে। এরপর শুক্রবার (১ জানুয়ারি) রাত ৯টার দি‌কে আমা‌কে পু‌লিশের পক্ষ থেকে কল ক‌রে জানানো হয়, রেজাউল বাথরু‌মে প‌রে গেছে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে এজন্য তাকে হাসপাতা‌লে ভ‌র্তি করা হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে রেজাউলের সঙ্গে আমা‌দের দেখা কর‌তে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন ইউনু‌স।

এদিকে স্থানীয় বা‌সিন্দা সুজন জানান, রেজাউ‌লের শরী‌রের বি‌ভিন্ন স্থানে জখ‌ম ও রক্ত জমাটের চিহ্ন র‌য়ে‌ছে। বি‌শেষ ক‌রে তার দুই পা‌য়ে স্পষ্ট জমাট র‌ক্তের চিহ্ন দেখা যা‌চ্ছে। এতে নিঃস‌ন্দে‌হ হয় অমান‌ষিক নির্যাত‌নেই রেজাউ‌লের মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে।

রেজাউ‌লের ভাই আজিজুল ক‌রিম ব‌লেন, কো‌নো অপরাধ ছাড়াই রেজাউল‌কে ধ‌রে নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। রেজাউ‌লসহ আরও দুইজন ব্যক্তিকে মামলায় ফাঁসা‌নোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তার ওপর নির্যাতন করা হয়ে‌ছে।

নিহতের প‌রিবার ও স্থানীয়রা নির্যাতনকারী পু‌লি‌শের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শা‌স্তি দাবি ক‌রে‌ছেন।

এ বিষ‌য়ে বরিশাল মহানগর গো‌য়েন্দা পু‌লি‌শের এক‌টি সূত্রে জানান, গত  ২৯ ডিসেম্বর রাত সা‌ড়ে ১০টায় রেজাউল‌কে আটক করা হয় ১৩৬ গ্রাম গাজা ও চারটি অ্যাম্পুল নেশা জাতীয় ইন‌জেকশনসহ। এদিন রাত পৌ‌নে ১২টায় তা‌কে কোতোয়ালি ম‌ডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে রা‌তেই মামলা দা‌য়ের করা হয় এবং প‌রের দিন রেজাউ‌লকে আদাল‌তের মাধ্যমে কারাগা‌রে পাঠানো হয়েছে।

ওই যুবক‌কে নির্যাত‌নের অভিযোগ মিথ্যা ব‌লে সাংবা‌দিক‌দের কা‌ছে দা‌বি ক‌রে‌ছেন এসআই ম‌হিউদ্দিন মা‌হী।

ব‌রিশাল কেন্দ্রীয় কারাগা‌রের সি‌নিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার ব‌নিক জানান, গত ৩০ তা‌রিখে আসামি রেজাউ‌লকে আমরা রি‌সিভ ক‌রি। সেখা‌নে ফরওয়া‌র্ডিং কাগ‌জে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আসামির পা‌য়ের বাহু থে‌কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তা‌কে হাসপাতা‌লে ভ‌র্তি করা হয়।

ব‌রিশাল শের-ই-বাংলা মে‌ডি‌ক্যাল কলেজ হাসপাতা‌লের জরুরি বিভা‌গের ইনচার্জ হ‌রে কৃষ্ণ সিকদার বাংলানিউজকে জানান, রক্তক্ষরণ জ‌নিত কার‌ণে ১ জানুয়ারি ৯টা ৩৫ মি‌নি‌টে হাসপাতালের পুরুষ সার্জারির এক নম্বর ইউনিটে আসামি রেজাউ‌লকে ভ‌র্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতা‌লের মরদেহ রাখা ঘ‌রের সামনে উপ‌স্থিত থাকা ব‌রিশাল কোতোয়ালি ম‌ডেল থানার এসআই আব্দুল কুদ্দুস জানান, এ ঘটনায় এক‌টি অপমৃত্যু মামলা দা‌য়ের করা হ‌বে এবং মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হ‌বে। এরপর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

এদিকে বিষয়‌টি স্পর্শকাতর হওয়ায় গণমাধ্যমে কিছু বল‌তে রা‌জি হন‌নি হাসপাতাল প‌রিচালক ডা. বা‌কির হো‌সেন।

ব‌রিশাল মহানগর পু‌লিশ ক‌মিশনার শাহাবু‌দ্দিন খান ব‌লেন, নিয়ম অনুযায়ী মাদকসহ আট‌কের পর আসামি‌ রেজাউলকে আদাল‌তে পাঠানো হ‌য়ে‌ছে। সেখান থে‌কে তা‌কে কারাগারে পাঠা‌নো হয়। যে‌হেতু স্বজনরা এখন একটি অভি‌যোগ ক‌রে‌ছেন সে‌হেতু বিষয়টা খতি‌য়ে দেখা হ‌বে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com