জনগণের ভোট ডাকাতী করে যারা ক্ষমতায় আসে তাদের মুখে গণগন্ত্রের কথা মানায় না: গয়েশ্বর
বর্তমান সরকার প্রধান ভারতকে খুশি করতে বিভিন্ন নদীর পানি দিয়ে ভারতের জনগণকে বাঁচালেও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ মরার পূর্বে পানি চাইলেও তাকে পানি দেওয়া হয়নি। বিশ্বজীতকে যখন প্রকাশ্যে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করছিল, তখন বিশ্বজিত পানি চাইলেও তাঁকেও পানি দেওয়া হয়নি। অথচ ভারত পানি চাওয়া মাত্র নৈতিক দায়িত্ব মনে করে ফেনি নদীর পানি দিয়ে এসেছেন বর্তমান ডে-নাইট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় নরগীর মালোপাড়াস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপি’র আয়োজনে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, এই সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব পার্শবর্তী দেশের নিকট বিক্রি করে দিয়েছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে অনেক আত্মত্যাগ ও মা-বোনে ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন। কিন্তু এখন এই স্বাধীন দেশে ছড়ি ঘোরায় ভারত। বর্তমান সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারনে এবং ব্যপক পরিমানে ভারত প্রীতির কারনে এমন অবস্থা হয়েছে। কিন্তু এই অবস্থা আর হতে দেওয়া হবেনা। এই ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের আইন আদালত কয়াত্ব করে রেখেছে। বর্তমান বিচারকগণ সরকারের কথার বাহিরে যেতে পারেন না বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের জেল হলেও জামিন দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়াও বিএনপি’র এক এমপি’র পাঁচ বছরের জেল হলেও মাত্র ১০ দিনের মাথায় তিনি জামিনে মুক্ত হন। অথচ বিএনপি চেয়ারপার্সন তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোন প্রকার অপরাধ ও দুর্নীতি না করলেও সম্পূর্ন রাজনৈতিক কারনে তাঁকে দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ কারাগারে রাখা হয়েছে। বার বার জামিন চাওয়া সত্বেও সরকার জামিন দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গয়েশ্বর চন্দ্র আরো বলেন, এই সরকার আইনশৃংখলা বাহিনীর ঘারের উপর উঠে ক্ষমতায় টিকে আছে। আর আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নির্লজ্জের মত রাতের অন্ধকারে এবং দিনের আলোয় প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। এখন এই পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সততার বড় বড় বুলি আওরায়। দেশে এখন কোন প্রকার গণতন্ত্র নাই। নাই সু-শাসন। দেশ বর্তমানে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী ও দুর্নীতিতে ভরে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ হাতে তৈরী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী ও শিক্ষার্থীদের হত্যা, ধর্ষন ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু সরকার প্রধান তাদের কিছুই করছেনা। লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করে এই অবস্থা জনগণের সামনে থেকে আড়াল করার জন্য আরেকটি ইস্যু তৈরী করছে। কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আস্থাভাজন যুবলীগের নেতারা ক্যাসিনোর মাধ্যমে জুয়া খেলে হাজার হাজার কোটি উপার্জন করেছে। সে টাকা গুলো আবার দেশের বাহিরে পাচারো করেছে। সেইসাথে এই অর্থ আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদেরও পেট ভরিয়েছে। কিন্তু আজ গুটি কয়েক নেতাকে এর দায়ে আটক করে সরকার লোক দেখানো আইন ও সু-শাসন দেখাচ্ছেন। চুনোপুটি ধরে রাঘব বোয়ালদের বাহিরে রেখেছে আরো বেশী করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করার জন্য।
তিনি বলেন, আন্দোলন আমাদের করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে এই যে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে, একটু দরকষাকষি করে যে রাস্তায় না অফিসের বারান্দায়, এটা পরিহার করতে হবে। আমাদের সাংগঠনিক অধিকার- আমরা সভা-সমাবেশ করব। অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। এই রাজপথ সরকারকে ইজারা দেয়া হয়নি। এই রাজপথ জনগণের। সেই রাজপথে হাঁটার অধিকার জনগণের আছে। সমাবেশ করার অধিকার আছে এবং আন্দোলন সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং চলবে। এর পর থেকে সরকারের কোনো অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নাই। সরকারের অনুমতি নিয়ে কখনও আন্দোলন হয় না।
গয়েশ্বর বলেন, প্রশাসনে যারা আছেন, এই সরকারের সকল কথা আমাদের শোনার দরকার নাই। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাদেরকে সরকার বলে মানবার আমাদের দরকার নাই। যারা চাকরি করেন, তারা সরকার মানতে পারেন, কারণ, সরকারি ট্রেজারির চেক বইতে সাইন করেন। সেই কারণে তারা মানতে পারেন। কিন্তু জনগণ মানে না। চাকরির জায়গায় চাকরি করুন, জনগণের মুখোমুখি হবেন না। আমাদের কর্মী, আমাদের নেতাদের গায়ে আঘাত করার চেষ্টা করবেন না। আমরা দীর্ঘকাল আঘাত সহ্য করব, মার খাবÑ এমন কোনো প্রতিশ্রুতি আমরা দেই নাই। পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মামলা যত পারেন দেন, মামলার ভয় করি না। আমার মৃত্যু অনিবার্য। আমি কালকেও মারা যেতে পারি। কিছুক্ষণ পরেও মারা যেতে পারি। আমার মৃত্যুই যখন আমি রোধ করতে পারব না, তখন জেলখানার ভয় দেখাবেন না। এর পর থেকে যত মামলায় দিক, আর কোনো কোর্টের বারান্দায় হাজিরা না। যা ফয়সালা হবে, রাস্তায় ফয়সালা হবে।
তিনি বলেন, বতর্মানে দেশে সকল প্রকার ভোগ্য পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ ত্রিপল সেঞ্চুরী করেছে। আবার লবন সেই পথেই হাটতে শুরু করেছিল। এখন সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। আর এ সকলের পিছনে সরকারের হাত রয়েছে। সরকার ইচ্ছা করেই এই বাজার সিন্ডিকেটের সদস্য ও ব্যবসায়ীদের আটক করছেনা। কারন আটক করতে গেলে সরকার প্রধানের নিকটতম লোকজন এসে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এতসব দুর্নীতি করে সরকারের দোসরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এই ভাবে আর দেশ চলতে দেয়া হবেনা। এখন এক দফা এক দাবী শেখ হাসিনার পতন। আর এই অবৈধ সরকারের পতন হলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে বলে জানান তিনি। গণতন্ত্র মুক্তি পেলে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য এখন কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই আন্দোলন করতে কারো বাধাই মানা হবেনা। সভা, সমাবেশ, মিছিল ও মিটিং করতে আর কারো অনুমতি নেওয়া হবেনা। বাধা দিলেই ব্যববস্থা নেওয়া হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে আন্দোলন করার জন্য বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্র্মী ও সাধারণ জনগণ এবং সমর্থকদের আহবান জানান গয়েশ্বর রায় চন্দ্র।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সহিদুন্নাহার কাজি হেনা, জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার। এছাড়াও রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সভাপতি শতকত আলী, মহানগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল হক রানা, জেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির সদস্য ও নওহাটা পৌর মেয়র শেখ মকবুল হোসেন, সৈয়দ মহসিন আলী, তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন উজ্জল, সাবেক সংসদ সদস্য জাহান পান্না, অ্যধাপক আব্দুল গফুর।
এছাড়াও রাজাপাড়া থানা বিএনপি’র সভাপতি শওকত আলী, শাহ্ মখ্দুম থানা বিএনপি’র সভাপতি মনিরুজ্জামান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, মতিহার থানা বিএনপি’র সভাপতি আনসার আলী, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি ইশারুদ্দিন ইশা, জেলা যুবদলের সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানী সুমন, মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম সমাপ্ত, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন রিমন, সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রেজা রিপন, মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি আরিফুল শেখ বনি, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সুলতান আহম্মেদ, মোজাফ্ফর হোসেন মুকুল, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান টিটো ও জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বাবলু, হাফিজুর রহমান আপেল, নাজির, হাশেম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনন্দ কুমার, শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সদর, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডভোকেট রওশন আরা পপি, অধ্যাপিকা সখিনা খাতুন, সামসুন্নাহার, নুরুন্নাহার, মুসলেমা বেলী, গুলশান আরা মমতা, রোজি ও জরিনা, জেলা মহিলা দলের সভাপতি এ্যাডভোকেট সামসাদ বেগম মিতালী, প্রচার সম্পাদক উম্মে হানী ও মহিলা নেত্রী রীতা উপস্থিত ছিলেন।
আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগর ছাত্র দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জনি, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী জ্যাকি ও জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম কুসুমসহ মহানগর, থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিএনপি, অঙ্গ ও সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকগন।