প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকাও মেরে খাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি মেম্বার
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর পুটিয়াখালী ওয়ার্ডের আব্দুস সোবাহান হাওলাদার স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন ধরে বিছানায়। একমাত্র ছেলে মাথায় টিউমার হয়ে মারা গেছেন। বড় মেয়েও স্ট্রোক করায় দুই সন্তান নিয়ে বাবার সংসারেই আছেন। ছোট মেয়ে রেকসনা স্থায়ী মানসিক প্রতিবন্ধী। ঘরটিও জরাজীর্ণ।
রেকসনার মা হনুফা বেগম ভিক্ষা করে সংসার চালান। পরিবারের অসহায়ত্ব দেখে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম রেকসনাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেন। কার্ডটি রেকসনার মা হনুফা বেগমের হাতে দিয়ে বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লার মাধ্যমে ভাতা সুবিধা নেয়ার বই ইস্যু করতে পরামর্শ দেন।
পরামর্শ অনুযায়ী বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লার কাছে কার্ডটি দিলে রেকসনাকে ব্যাংকে নিয়ে অ্যাকাউন্ট করান। অ্যাকাউন্ট করানো বাবদ টাকা চাইলেও ভিখারিনী হনুফা বেগম তা দিতে পারেননি।
গত জুলাই মাসে রেকসনার ভাতা বাবদ ৯ হাজার টাকা তুলে হনুফা বেগমকে তিন হাজার টাকা দেন ফারুক হোসেন মোল্লা। বাকি ছয় হাজার টাকাই আত্মসাত করেন তিনি। পরে ভাতার বই ও বাকি টাকা-দুটোর কিছুই পাননি বলে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন হনুফা বেগম।
একই গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে খোকন ছোটবেলা থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। খোকন থাকেন বোন শাহিদা বেগমের কাছে। খোকন প্রতিবন্ধীর ভাতা বাবদ একটি কানাকড়িও পাননি।
শাহিদা বেগম বলেন, ‘পুরান (সাবেক) আমিন মেম্বার আমার ভাই খোকনকে প্রতিবন্ধীর কার্ড করিয়ে দেন। কার্ড নিয়ে বর্তমান মেম্বার ফারুক মোল্লার কাছে গেলে কোনো টাকা-পয়সা আসেনি জানিয়ে ব্যাংকে নিয়ে টিপসহি রেখে একটি অ্যাকাউন্ট করে দেন। অনেক মানুষের কাছেই শুনেছি যারা প্রতিবন্ধী তারা তাদের ভাতার টাকা পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ভাই খোকনের নামে যে টাকা আসছে তা তিন মাস আগেই উঠিয়ে নিয়েছেন ফারুক মোল্লা।’
‘তারপর আমরা ওর নামের কাগজপত্র উঠিয়ে দেখি ওর নামের টাকা সেই তুলে নিছে। ফারুক হোসেন মোল্লার কাছে গেলে তিনি টাকা আসলেই পাবেন বলে জানিয়ে দেন।’
গ্রামের আরেক মানসিক প্রতিবন্ধী মীর ইউনুছ আলী। থাকেন ভাই মীর আফজাল হোসেনের কাছে। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার কোনো বুদ্ধি বিবেচনা নেই। আফজাল হোসেনই তাকে দেখাশুনা করছেন।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘সাবেক মেম্বার আমিনুল ইসলাম আমার প্রতিবন্ধী ভাই ইউনুছের জন্য কার্ড করে এনে দিয়েছেন। কার্ডটি অ্যাক্টিভ করতে বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক মোল্লার কাছে গেলে তিনি ভাতা বই করার জন্য তিন হাজার টাকা নেন। পরে আবার ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে ৫০০ টাকা নেন। এরপর থেকে যতবারই তার কাছে খোঁজ নিতে যাই ততবারই তিনি পিঠে হাত দিয়ে বলে আসছেন, আসলেই টাকা পাবেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানি সব টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন।’
শ্রমজীবী বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী রেহেনা বেগম বলেন, ‘ফারুক মেম্বার ভিজিডি কার্ড করার কথা বলে তিন হাজার টাকা চাইলে তাকে শ্রমবিক্রির ২৫শ টাকা দেয়া হয়েছে। দুই বছর মেয়াদি কার্ডের তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো কার্ড পাইনি। মেম্বারের কাছে গেলে সবসময়ই সান্ত্বনা দিয়ে পাঠিয়ে দেন।’
শুধু প্রতিবন্ধী রেকসনা, খোকন, ইউনুস এবং বেলায়েতের টাকাই না; এভাবে আরও অনেকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর পুটিয়াখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) ফারুক হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আত্মসাতকারী ইউপি সদস্যের বিচার দাবি করছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত সবাইকে সবকিছু সুষম বণ্টন করছি। যার যেভাবে প্রাপ্য তাকে সেভাবেই দিয়েছি। রেকসনা, খোকন এবং ইউনুসের টাকা তাদের স্বজনরা উত্তোলন করে নিয়েছেন। স্থানীয় প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’