অগ্নিদগ্ধ জেনি: ৮ মাসেও পুলিশ মামলা নেয়নি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

0

ঢাকা: বাসার বেলকুনিতে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তারে জড়িয়ে চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী ইশরাত জাহান জেনির হাত-পা ও শরীরের অংশ পুড়ে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জেনির ঝলসানো ও পোড়া শরীরে ১০ থেকে ১২টি অপারেশন করার পরামর্শ দেন। জেনির পরিবার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ না করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


একইসঙ্গে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের (ডিসির) কাছে অভিযোগ জমা দেন। আর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

এ ছাড়া মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন মা কাজি প্রিয়া আকতার মুক্তা। যদিও সাহায্যের বিষয়ে এখনও কেউ এগিয়ে আসেনি। কোনো উপায় না পেয়ে জেনির মা চিকিৎসা (দুটি প্লাস্টিক সার্জারি), লেখাপড়া, বিয়ে এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।  

গত মঙ্গলবার ওই রিটের শুনানি নিয়ে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে একটি কমিটি করে আগামী দু’মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

একইসঙ্গে জেনির পরিবারকে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

জেনির চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা দাবি করে পরিবারের পক্ষে রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মোজাম্মেল হক। তার সঙ্গে ছিলেন সাকিব মাবুদ তানিফ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আইনজীবী সাকিব মাবুদ তানিফ জানান, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার হামজার বাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান জেনির হাত-পা ও শরীরের অংশ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২৬ নভেম্বর জেনির মা কাজি প্রিয়া আকতারের পক্ষে রিট করেন তাদের আইনজীবী।  রিটে চিকিৎসা খরচ ও ১২টি সার্জারি বাবদ এক কোটি ২০ লাখ টাকা, আগের চিকিৎসা খরচ বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং জেনির লেখাপড়া, বিয়ে এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা চাওয়া হয়।

জেনির মা কাজি প্রিয়া আকতার মুক্তা বলেন, বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তারে জড়িয়ে মেয়ের হাত-পা ও শরীরের অংশ পুড়ে যায়। এরপর চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দফতরে সাহায্যের জন্য গিয়েছি। কেউ সাহায্যের জন্য আসেনি। সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলেও অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ না করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে এসেছি।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন শ্যামলী আবাসিক এলাকার পশ্চিম ষোলশহর ৯০৬/২-এ এবিসি হাইসের তৃতীয় তলায় বসবাস করতো জেনির পরিবার। চলতি বছরের গত ২৬ মার্চ বিকাল ৩টার দিকে বেলকুনিতে পরিত্যক্ত একটি পাইপ সরাতে গিয়ে বেলকুনির পাশেই ১১ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে ইসরাত জাহান জেনির (১১) ডান হাতের কব্জি, বাম হাতের কনুই, বাম পায়ের পুরো পাতা এবং পেটের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এ ছাড়া পেট থেকে বাম উরু পর্যন্ত সম্পূর্ণ পুড়ে ঝলসে যায়।

এর পর মুমূর্ষু ও জলসানো মেয়েকে নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত বার্ন ইউনিটে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর মেয়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে ৯ এপ্রিল ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। জেনির এক হাত ও এক পায়ের কিছু অংশ কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে। আর চারটি অপারেশন করা হয়।

সেখানে চিকিৎসা করতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এরপর জেনির চিকিৎসা বাবদ বিভিন্নভাবে মোট ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে দাবি করেন তার পরিবার।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com