খালেদা জিয়ার অস্টিও আর্থাইটিস, ডায়াবেটিসসহ অন্য সব রোগই বিদ্যমান, প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা

0

গুলশান এভিনিউয়ের ‘ফিরোজা’য় কেমন আছেন ৭৪ বছর ঊর্ধ্ব বেগম খালেদা জিয়া?- এমন প্রশ্ন দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও।

পারিবারিক ও দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। অস্টিও আর্থাইটিস, ডায়াবেটিসসহ অন্য সব রোগই বিদ্যমান। এখনো চলাফেরায় অন্যের সাহায্য নিতে হয়। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা কমেনি। বাসায় দুজন নার্স স্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। তারা বাসায় থেকেই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন এবং ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন। এ ছাড়া তাঁর মেরুদ-, বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে শক্ত হয়ে যায়। দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। তিনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খান। বাম চোখেও একটু সমস্যা রয়েছে তাঁর।

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্য জানান, প্রতিদিনই একজন চিকিৎসক ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও যান মাঝে-মধ্যে। ওষুধ খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তিনি। এখন নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা ৮ থেকে ১৪’র মধ্যে ওঠানামা করে। লন্ডন থেকে পুত্রবধূ, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান বেগম জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সেজো বোন সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। জেল থেকে এসেও শারীরিক তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বাসায় থেকেই যতটুটু সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শরীরের গিরায় গিরায় এখনো ব্যথা কমেনি। একা দাঁড়াতেও পারছেন না, হাঁটাচলাও করতে পারছেন না। বিছানা থেকে বাথরুমে যেতেও তাঁর অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। এমনকি খাবার খেতেও কারও সহায়তা নিতে হয়। রুম থেকে ড্রয়িং রুমে বা রিডিং রুমে যেতেও সহায়তা লাগে। খাবারে কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিক খাবারই খাচ্ছেন। যখন যেটা তাঁর পছন্দ তা-ই রান্না করে দেওয়া হয়।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাসায় সাধারণ খাবারই খাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে ডায়াবেটিস থাকায় সতর্কভাবে খাবার খান তিনি। তাঁর পছন্দের খাবার হচ্ছে স্যুপ, সবজি-রুটি, মুরগি, লাউ ও মাছের ঝোলের তরকারি। মাঝে-মধ্যে সরু চালের ভাত ও পোলাও খান তিনি। তাঁর বাসায় পুরনো বাবুর্চিরাই রয়েছেন। অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা বাসা থেকে রান্না করেও খাবার নিয়ে আসেন। 

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সিনিয়র সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা আগের মতোই। ডায়াবেটিস এখনো ওঠানামা করে। আগে জয়েন্টে জয়েন্টে যে ব্যথা ছিল সেগুলো এখনো আছে। তিনি আগের মতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। কাউকে ধরে হাঁটাহাটি করতে হয়। তাঁর চিকিৎসা সার্বিকভাবে তদারকি করছেন তাঁর পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান। আমরাও সহযোগিতা করছি।’ 

সার্বিক বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সাজা স্থগিত হলে তো তাঁর ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা না। পার্থক্যটা হচ্ছে, শুধু হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওখানে তিনি হোমলি পরিবেশের মধ্যে আছেন। যেটাকে সোজা কথায় বলা যায়- এটা হচ্ছে গৃহে অন্তরীণ করা। অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট তো এখানে হচ্ছে না। তাঁর উন্নত চিকিৎসা জরুরি।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট (ষড়যন্ত্রমূলক) দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট (ষড়যন্ত্রমূলক) দুর্নীতি মামলায়ও তাঁর সাজার রায় হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলা রয়েছে। ২৫ মাসেরও বেশি সময় অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাবন্দী থাকার পর চলতি বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরও এক দফায় তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com