পদত্যাগীদের ঝুলিয়ে রাখার কৌশলে বিএনপি
বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা দল থেকে পদত্যাগ করলেও তাদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি দলটি৷ তাদের পদত্যাগপত্র আপাতত গ্রহণ করা করে কোনো না কোনোভাবে তাদের দলের সঙ্গেই রাখার কৌশল নিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা৷
এক সপ্তাহে বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা পদত্যাগ করলেও এদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি দলটি৷ খবর ডিডব্লিউ’র।
মোরশেদ খান, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিএনপি থেকে পদত্যাগের বিষয়টি এখন বেশ আলোচিত৷ এদের মধ্যে দুজন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন৷ তবে আরিফুল হকসহ সিলেটের চার বিএনপি নেতা যুবদলের কমিটি গঠনের দ্বন্দ্বে পদত্যাগ করেছেন৷ আরিফ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আশীর্বাদপুষ্টদের কাছে হেরে যাওয়ার পর পদত্যাগপত্র জমা দেন৷
আর মাহবুবুর রহমান তার স্পষ্টবাদিতার কারণে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরাগভাজন হন৷ কেন্দ্র থেকে তাকে অবস্থান বদলাতে বলার পর তাতে রাজি না হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন বলে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানিয়েছেন৷ অন্যদিকে মোরশেদ খান পদত্যাগ করেছেন তার ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে৷
বিএনপি এদের কারো পদত্যাগপত্র নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি৷ বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের পদত্যাগকে দলটি সহজভাবে নেয়নি৷ আর মাহবুবুর রহমান যদি পদত্যাগ করে চুপ থাকেন তাহলে কোনো আপত্তি নেই তাদের৷ কারণ ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি সংস্কারপন্থি ছিলেন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তেরও তিনি বিরোধী৷
বিএনপি থেকে শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগের তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে৷ গত কয়েক বছরে বিএনপি ছেড়েছেন থেকে পদত্যাগ করেছেন মোসাদ্দেক আলী ফালু, আলি আসগর লবি, সমশের মুবিন চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, পারটেক্স গ্রুপের এম এ হাসেমসহ আরেও কিছু নেতা৷ এদের মধ্যে শুধু ইনাম আহমেদ চৌধুরীর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে৷ কারণ তিনি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন৷ কিন্তু বাকিদের পদত্যাগপত্র এখনো পড়ে আছে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়৷
বিএনপিতে এখন আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শাহ মেয়াজ্জেম হোসেনসহ আরও কিছু নেতা আছেন নিস্ক্রিয়৷ নোমানকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হলে তা পালন করেন তবে নিজে উদ্যোগী হয়ে কিছু করেন না বলে জানা গেছে৷ আর বাকি দুজনকে কাজ দেয়া হলেও তারা করেন না বা করবেন না ধরে নিয়ে তাদের অবসরপ্রাপ্ত ও নিস্ক্রিয় নেতা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে৷
বিএনপিতে এখন এই পদত্যাগী, নিস্ক্রিয় এবং অবসরপ্রাপ্তদের ঝুলিয়ে রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে৷ কারণ দলে তাদের অতীতের অবদান এবং ভবিষ্যতে যদি কখনো সক্রিয় হন, সেই আশায়৷ তাই দু-একজন ছাড়া আর কারোরই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছে না বিএনপি৷ এছাড়া নিস্ক্রিয়দের বেশি কিছু বলছেন না তারা৷
পদত্যাগ ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই সময়ে পদত্যাগকারী তিন নেতার দুজনকে তাদের মন্তব্য জানতে পাওয়া যায়নি৷ আর মাহবুবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘মোরশেদ খান একজন বড় ব্যবসায়ী৷ তিনি দেশের প্রথম মোবাইল ফোন কোম্পানি সিটি সেলের মালিক, সেটা এখন বন্ধ৷ তার আরো অনেক ব্যবসা আছে৷ রাজনীতির কারণে তাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ তিনি নিজেইতো বলেছেন বিএনপির রাজনীতিতে তার আর কিছু দেয়ার নেই৷ মাহবুবুর রহমান পদত্যাগের কথা বললেও তা বিএনপি পায়নি৷’
তিনি বলেন, ‘আসলে এখন একটা অস্থিরতা চলছে, মুক্ত পরিবেশ নেই৷ তাই বয়স বিবেচনায় যারা এখন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করছেন বা দূরে থাকছেন, মুক্ত পরিবেশ হলে হয়তো তারা সবাই সক্রিয় থাকতেন৷’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন কয়েকজনের পদত্যাগের কারণে বিএনপি দুর্বল না হয়ে আরও শক্তিশালী হবে৷ তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেবরাওতো বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে গিয়েছিলেন, তাতে কী হয়েছে? দল আরও শক্তিশালী হয়ে ক্ষমতায় এসেছে, বিএনপি একটা বটগাছ৷ কে এলো আর কে গেল তাতে কিছু আসে যায় না৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ যদি মনে করেন তার পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব নয় তিনি পদত্যাগ করতেই পারেন৷’ –ডয়চে ভেলে