নুরদের ওপর হামলার সাক্ষী নেই, আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার অভিযোগ প্রমাণে কোনো প্রকার ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করা যায়নি’। তাই মামলা থেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ নয় আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আকতারুজ্জামান ইলিয়াস।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, মঞ্চের ঢাবি শাখার সভাপতি এ এস এম সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, এ এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসিম উদ্দিন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ (হল থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত), জিয়া হল শাখার সভাপতি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম মাহিম, মেহেদী হাসান শান্ত ও মাহবুব হাসান নিলয়।
তৎকালীন ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ রইচ হোসেন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন । পরে তৎকালীন ভিপি নুর এ ঘটনায় আরেকটি মামলা করতে গেলে তার অভিযোগটি সম্পূরক এজাহার হিসেবে নেয়া হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মামুন-বুলবুল গ্রুপের ৩৫-৪০ জন নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে রাষ্ট্রপতি বরাবর টেলিনর কর্তৃপক্ষের উকিল নোটিশ প্রদানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে মামুন ও বুলবুলের নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
মিছিলটি মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার পথে ডাকসু ভবনের সামনে পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত ভিপি নুরুল হক নুর, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা মামুন, রাশেদ ও ফারুকসহ আরও ২০-২৫ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের বর্ণিত (এজাহারনামীয়) নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য ও ইটপাটকেল বিনিময় হয়। একপর্যায়ে ভিপি নুরসহ তার সঙ্গীরা ডাকসু ভবনে প্রবেশ করেন। তখন মামলার এজাহারনামীয় আসামিসহ আরও ৩০-৩৫ জন আসামি লাঠিসোঁটা ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ‘অবৈধ জনতাবদ্ধে’ ডাকসু ভবনে ঢুকে ভিপি নুর ও তার সহযোগীদের এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন । তারা ডাকসু ভবনে নুরের কক্ষের জানালার কাঁচ, চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। মারামারিতে অংশ নেয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা হত্যার উদ্দেশ্যে নুরসহ তার সঙ্গীয় অন্যান্য নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করেন।
দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীসহ প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এবং প্রক্টর টিমের সহযোগিতায় ভিপি নুরসহ আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আসামিরা ‘অবৈধ জনতাবদ্ধে’ ডাকসু ভবনে অনধিকার প্রবেশ করে হত্যার উদ্দেশ্যে নুরদের ওপর হামলা ও কক্ষে ভাঙচুর চালিয়ে পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪২৭/১০৯ ধারায় অপরাধ করায় মামলা করে পুলিশ।
তবে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন আনুমানিক সাড়ে ১২টায় মামুন-বুলবুলের নেতৃত্বে মঞ্চের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে মধুর ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। মিছিলটি ডাকসুর সামনে পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা মামুন, রাশেদ, ফারুকহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে উত্তেজিতভাবে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যার ফলে উভয়পক্ষ ধাক্কাধাক্কিতে নিচে পড়ে সাধারণ আহত হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অত্র ঘটনাকে ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার অনুসারীরা ‘চাঞ্চল্যকর’ করার জন্য একটি ইস্যু তৈরি করে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন। যার কারণে বাদী ঘটনা প্রত্যক্ষ না করে লোকমূলে ঘটনা শুনে মামলাটি দায়ের করেন। ঘটনাটি তদন্তকালে অধর্তব্য অপরাধ পেনাল কোড ৩২৩ ধারামতে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়, অবৈধ জনতাবদ্ধে কোনো আসামি সেখানে সমবেত হননি। আসামিরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যারা প্রতিনিয়ত ডাকসু ভবন ও মধুর ক্যান্টিনে একত্রে মিলেমিশে আসা-যাওয়া করেন। তাই পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮ ধারা প্রমাণিত হয়নি।
অন্যদিকে মামলাটি প্রমাণের স্বপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণাদি, আলামত তদন্তকালে পাওয়া যায়নি। তদন্তকালে ভিকটিম নুরুল হক নুর দায়েরকৃত সম্পূরক এজাহারের বর্ণিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মামলা প্রমাণের স্বপক্ষে বাদী এবং ভিকটিমরা কোনো প্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। এমতাবস্থায় মামলাটি মুলতবি রাখলে শুধু সরকারি অর্থ, শ্রম, সময় অপচয় ছাড়া অদূর ভবিষ্যতেও কোনো সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাই মামলাটি মুলতবি না রেখে এজাহারনামীয় আসামি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ নয়জনকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দানের আবেদন জানানো হয় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে।