জয়-এর ঘুষ গ্রহনের অভিযোগে সংবাদ: যুবলীগ নেতার দায়ের করা মামলায় বিচার শুরুর নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এর দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) চট্টগ্রামের চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরিফুল আলম ভূইয়ার আদালত নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তকে বহাল রেখে মাহমুদুর রহমানসহ তিনজনের পক্ষে দায়ের করা রিভিশন আবেদনটি খারিজ করে দেন। ফলে চট্টগ্রামের আদালতে এ মামলা চলতে আর কোনো বাধা রইল না।
২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ছেলের দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের তৎকালীন অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জমান খাঁনের আদালতে মানহানির এ মামলাটি করেছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ শহীদ হোসেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলী ও প্রতিবেদক এম. আবদুল্লাহ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এর নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন মো. আবদুল্লাহ।
বাদীর আইনজীবী মো. আব্দুল আজিজ গণমাধ্যমকে জানান, এক যুবলীগ নেতার করা মামলায় ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরবর্তীতে চার্জ গঠন সঠিক হয়নি জানিয়ে আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আদালতে একটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন। এ রিভিশন বিষয়ে পরবর্তীতে অনেকগুলো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) আসামি পক্ষের করা এই রিভিশন আবেদনটি খারিজ করে তাদের বিরুদ্ধে বিচার চলবে বলে আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রতিবেদক অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছেপেছেন। এতে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপুত্র জয়ই নয়, মামলার বাদীরও মানহানি ঘটেছে। এরপর ২০১৮ সালের ৪ জুলাই মাহমুদুর রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ বিচার শুরুর আদেশের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে মাহমুদুর রহমানসহ তিনজনের আইনজীবীরা আদালতে একটি রিভিশন আবেদন করেন।
এখানে উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় এবং তৎকালীন জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের সংবাদ প্রকাশ হলে ২৫টি জেলায় মামলা দায়ের করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এই মামলা গুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল তখন হাইকোর্ট বিভাগে। মামলা গুলোর মধ্যে ঢাকার একটি মামলা দায়ের করেছিলেন তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী নিজে। হাইকোর্ট বিভাগ তখন মূল সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরীর মামলাটি চলমান রেখে বাকী সব গুলো স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। ২০১৩ সালের মে মাসে তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরীর মামলাটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত খারিজ করে দিয়েছে। মূল সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে গেছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই মূল সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা প্রমাণ করতে পারেননি। অথচ সংক্ষুব্ধ নন এমন ব্যক্তিদের দায়ের করা মামলা নিয়ে এখন চট্টগ্রামের দলীয় আদালতে টানা হেচরা চলছে।
এখানে আরো উল্লেখ্য, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২০১৩ সালের এপ্রিলে রিমান্ডের আদেশ দেয়া হয়েছিল ম্যজিষ্ট্রেট আদালত থেকে। এই রিমাণ্ড চ্যালেঞ্জ করে তাঁর স্ত্রী রীট আবেদন করেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগে। তখন মরহুম অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাইকোর্টের শুনানীতে বলেছিলেন, স্ত্রী সংক্ষুব্ধ হতে পারেন না। অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নাঈমা সুলতানা আদেশও দিয়েছিলেন।
অথচ, সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল তৌফিক-ই-এলাহি এবং জয়-এর ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ নিয়ে। আর এখানে মামলা বাদী হলেন চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা,যার সঙ্গে এই মামলার কোন কোন সম্পর্ক নাই। ! এই মামলা এখন শুনানীর বিচারের আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা জজ আদালত। এই হচ্ছে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদি সরকারের বিচার ব্যবস্থার হাল হকিকত।